’বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক সমেমলনে শেখ হাসিনা সবার খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেন

বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক সমেমলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সবার খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেন

ভিওবিডি, নিউইয়র্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার রোমে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক তিনদিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড সামিটে ভাষণ দেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য, বিশেষ করে প্রানিতক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শুধু উৎপাদনই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। এ জন্য জাতীয় ও আনতর্জাতিক পর্যায়ে স্বচ্ছ ও সমতাভিত্তিক খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। সোমবার রাতে রোমে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আয়োজিত ’বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক সমেমলনে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যনত বিশ্বব্যাপী হঠাৎ খাদ্য ঘাটতি এবং খাদ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এ হুমকি আরো বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১০০ কোটি মানুষ এখন অব্যাহত ক্ষুধা-দারিদ্র্যের সমমুখীন। বিশ্বের যে কোনো মানুষের জন্যই এ চিত্র বেদনার এবং কষ্টের। ক্ষুধাপীড়িত এ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বাস করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে। তাদের একদিকে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের উন্নয়ন কর্মসূচি এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এরই মধ্যে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছে। ঋণ সুবিধা কমে গেছে এবং দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও হ্রাস পেয়েছে। গত দুই বছরে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল অবস্থায় নিয়ে গেছে। পাশাপাশি এ দুরবস্থার সঙ্গে যোগ হয়েছে সার-বীজের বাড়তি মূল্য এবং পানি ও জ্বালানির স্বল্পতা। উন্নত দেশগুলোতে অনুন্নত দেশগুলোর পণ্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় এ পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারণ করেছে।শেখ হাসিনা বলেন, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আনতর্জাতিকভাবে প্রশংসিত নির্বাচনের মাধ্যমে তার সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন সরকারকে এসব সমস্যার সবই মোকাবেলা করতে হচ্ছে। খাদ্য সমস্যা নিরসনের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা কৃষি নীতিমালা বাসতবায়নের পদক্ষেপ নেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তার সরকার দায়িত্ব পালনকালে উৎপাদনবান্ধব কৃষিনীতি বাসতবায়নের ফলে তারা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন। এ জন্য তারা ফাও-এর সেরেস পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। এবার দায়িত্ব নেয়ার পর তারা সারের দাম দুদফা কমিয়ে কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনেছেন এবং সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সে জন্য বাজারজাতকরণের বাধাগুলো দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছেন।তিনি বলেন, খাদ্যঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা বন্যা, খরা, লবণাক্ততা সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন শস্যজাত ও অর্থকরী ফসল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রমকে জোরদার করেছেন। এছাড়া কৃষকরা যাতে সহজে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন, সহজে কৃষিঋণ পেতে পারেন সে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। পাশাপাশি তারা শস্যের বহুমুখীকরণ কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং সারা বছর খাদ্যশস্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য খাদ্যশস্য মজুদের লক্ষ্যে নতুন নতুন খাদ্যভান্ডার তৈরি করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এছাড়া নগদ অর্থ, খাদ্য সহায়তা এবং অন্যান্য দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে- যাতে দরিদ্র মানুষের কাছে সহজেই খাদ্য পৌঁছতে পারে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু উৎপাদনই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। এ জন্য সবার কাছে, বিশেষ করে প্রানিতক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। এ কারণেই জাতীয় ও আনতর্জাতিক পর্যায়ে স্বচ্ছ ও সমতাভিত্তিক খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, এ শীর্ষ সমেমলনের ঘোষণা বাসতবায়ন করতে হলে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। বিশ্বনেতাদের কাছে তার জিজ্ঞাসা, উন্নত দেশগুলো যদি তাদের আর্থিক ধস ঠেকাতে হাজার কোটি ডলার ব্যয় করতে পারে, সেখানে ক্ষুধাপীড়িত লাখ লাখ মানুষের আহার জোগাতে তাদের কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই?তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা যে কীভাবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে জিমিম হয়ে পড়ে এবং তার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়, বাংলাদেশ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুতের মতো সপর্শকাতর ও অগ্রাধিকার সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে বাধ্য করছে। অর্থ সঙ্কটের জন্য কৃষি গবেষণা, বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন সংক্রানত গবেষণা কার্যক্রম দারুণভাবে বাধাগ্রসত করছে। পর্যাপ্ত তহবিল পেলে উচ্চ ফলনশীল ধানের প্রজাতি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন সম্ভব। পাশাপাশি লবণাক্ততা, খরা ও জলাবদ্ধতা সহনশীল প্রজাতি উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা অত্যনত জরুরি হয়ে পড়েছে।





শেখ হাসিনার আগমনে রোমে প্রবাসী বাঙালিদের আনন্দ-উৎসব

শাবান মাহমুদ:
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোম সফর উপলক্ষে গত শনিবার রাতে রোমের গাজীপুর মিলনায়তনে প্রবাসী বাঙালিরা আনন্দ উৎসব করেছে। প্রবাসী বাঙালিরা ‘ওয়ার্ম-আপ’ কর্মসূচি হিসেবে সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নৃত্যঅনুষ্ঠানে মাতিয়ে রাখে দর্শকদের। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তাহের"ল ইসলাম, সীমা চৌধুরী, শাহনাজ সুমী, মঞ্জুরি মন্ডলসহ অনেকে। এদিকে রোমের বিভিন্ন স'ানে শোভা পা"েছ শেখ হাসিনার হাস্যোজ্বল ছবি।
শনিবার রাতে মিলনায়তনটি পরিণত হয়েছিল প্রবাসী বাঙালি ও দলীয় নেতাকর্মীদের মিলন মেলায়। প্রবাসী নেতাদের মধ্যে যারা উপসি'ত ছিলেন তারা হলেন- সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি অনীল দাশগুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান শরীফ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাসরত বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও লেখক এম নজর"ল ইসলাম, ইতালী আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল ও সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হক প্রমুখ। আগামীকাল শেখ হাসিনাকে প্রবাসী বাঙালিরা সংবর্ধনা জানানোর প্রস'তি নিচ্ছে ।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা