জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মব্যসততা



জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মব্যসততা


ভিওবিডি, নিউইয়র্ক থেকে গত ২২ সেপ্টেম্বর


জাতিসংঘ মহসচিব বান কি মুন এর দেয়া নৈশভোজ ” ক্লাইমেট চেঞ্জ ওয়ার্কিং ডিনার” এ জাতিসংঘ মহসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বারাক ওবমার পাশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৬৪তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রানত সমেমলনে অংশ নিয়েছেন। ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে নিউইয়র্ক এসেই তিনি এ সমেমলনে অংশ নেন। একইদিনে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের একটি নৈশভোজেও অংশ নেন। ২৫টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সমমানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এই নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। নৈশভোজে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শেখ হাসিনার আসন ছিল তার পাশেই। ডিনার পার্টিতে পাশাপাশি বসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নানা বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে প্রেসিডেন্ট ওবামা বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, জলবায়ু প্রতিরোধে উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে আনতরিক অর্থে এগিয়ে আসার যে আহ্বান জেনেভা সমেমলনে আপনি (শেখ হাসিনা) করেছেন তা আমাকে অভিভূত করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সহানুভূতি প্রকাশ করতে চাই বাংলাদেশের মত অসহায় রাষ্ট্রগুলোর প্রতি এমন পরিস্থিতির অসহায় শিকার হওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাও প্রশংসনীয়।
২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) জাতিসংঘ সদর দফতরে ২৫ দেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীদের সমমানে বান কি-মুনের এ ডিনার পার্টিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওবামার হৃদ্যতাপূর্ণ এ আলাপচারিতার তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ। এ সময় শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাংলাদেশের গৃহীত কর্মসূচির কথা বর্ণনা করেন এবং তা রোধকল্পে ধনী দেশগুলোর যাবতীয় সহায়তা কামনা করেন।
২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে) জাতিসংঘ সদর দফতরে পুনরায় ওবামার সঙ্গে বৈঠক হবে শেখ হাসিনার। সেটি হবে জাতিসংঘ শানিতরক্ষা মিশনে সর্বাধিক সৈন্য সরবরাহকারী ১০টি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর গ্রুপ বৈঠক। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শানিতরক্ষা বাহিনীতে সর্বোচ্চ অবদান ক্রমানুসারে পাকিসতানের ১০ হাজার ৬৬২ জন, বাংলাদেশের নয় হাজার ৩৪২ জন, ভারতের আট হাজার ৭৫৩ জন, নেপালের চার হাজার ১৫৯ জন, রুয়ান্ডার তিন হাজার ৬০৮ জন, জর্ডানের তিন হাজার ২৪৮ জন, ঘানার তিন হাজার ১৬০ জন, মিশরের তিন হাজার ১৪৬ জন এবং ইতালির দুই হাজার ৭০১ জন সৈনিক ও পুলিশ রয়েছে। এর বাইরে সর্বোচ্চ অবদান রাখা দেশের অধিকাংশই এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব দেশগুলো থেকে এসেছে বলে জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামার আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ শানিতরক্ষা কার্যক্রম ও এ কার্যক্রমের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার পর্যায়ে আরো বৃহত্তর অবস্থান পাওয়ার জন্য চেষ্টা চলাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জানান, এ মুহূর্তে শানিতরক্ষা কার্যক্রমের কমান্ডিং পদে মাত্র একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু এ মিশনে আমরা সেনা প্রেরণকারী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি সে কারণে মিশনের সিনিয়র কমান্ডিং পর্যায়ে আমাদের আরো বেশি অংশগ্রহণ থাকা উচিত। তিনি আরো বলেন, ঢাকা জাতিসংঘ সদর দফতরে ডিপিকেও-তে আরো বেশি সিনিয়র পর্যায়ের পদ চাইছে। ২৫টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সমমানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এর দেয়া নৈশভোজে বান কি মুন (ডানে মধ্যে) এর পাশে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বারক ওবামা এবং তার পাশে সবুজ শাড়ী পরিহীত শেখ হাসিনাকে দেখা যাচ্ছে।এদিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা দেয়া ডিনার পার্টিতে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। এর আগে মহাসচিবের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন তিনি। আজ বিশ্বের নারী সরকারপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সমমানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে জাতিসংঘের শানিতরক্ষী মিশনে নারী সৈন্য নেয়ার এবং জাতিসংঘ শানিতরক্ষা মিশনে নেতৃস্থানীয় পদে বাংলাদেশের প্রতিনিধির সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে প্রসতাব রাখা হবে। শেখ হাসিনা কমলওয়েলথ মহাসচিব কমলেশ শর্মা ও ওআইসি মহাসচিব প্রফেসর একলেমেদ্দিন ইসানোগলো, নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল, ডেনিস প্রধানমন্ত্রী লারলক রাসমুজে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামমদ নাশিদ, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রত্নসিরি বিক্রম নায়েকে, কেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাফিয়া অদিনগাসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আনতর্জাতিক সংগঠনের প্রধানদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব গেদলেদলেকিসা জুয়ার দেয়া সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আয়োজিত খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে যোগ দেবেন। তিনি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ভবনের উদ্বোধন করবেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ডডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলে ওআইসি মহাসচিবের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। একই হোটেলে ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নিউজ উইক, ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ, আল জাজিরা, ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ও ভয়েস অব আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের উদ্দেশে এক সংবাদ সমেমলনে বক্তৃতা করবেন এবং বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্র্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। এসময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন সজিব ওয়াজেদ জয়সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গী দলকে নিউইয়র্কের হোটেল গ্র্যান্ডহায়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি এ হোটেলে অবস্থান করবেন। এর আগে গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। ওই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আব্দুল আজিজ, নসরুল হামিদ দীপু এমপি, শিক্ষাবিদ ড. মুসতাফা নূর-উল ইসলাম, পররাষ্ট্রসচিব মোহামমদ মিজারুল কায়েস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ, উপ প্রেসসচিব মাহবুবুল হক শাকিল, নকিব আহমেদ এবং শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহমুদ হাসান বাবুল।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসী বাঙালিদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দিতে দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক আতাউর রহমান শামীম এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সাংবাদিকদের মধ্যে সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শামীম আহমেদ, দৈনিক সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি শাহেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সুভাষ চন্দ বাদল ও ইন্ডিপেডেন্ট পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার প্রদীপ রায়।
প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যাবেন এবং সেখান থেকে কাতারের দোহার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর দোহা ত্যাগ করবেন এবং ১ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী কান ও চোখের চিকিৎসাও নেবেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার চোখের চিকিৎসক অধ্যাপক শাহে আলম এ কারণে ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা