জলবায়ু পরিবর্তনের বাংলাদেশ যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে উদ্ধার পেতে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


জল বায়ু পরিবর্তনের বাংলাদেশ যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে উদ্ধার পেতে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ভিওবিডি, নিউইয়র্ক থেকেপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যে ক্ষতির সমমুখিন হয়েছে তা থেকে উদ্ধার পেতে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছেন। আর এই অর্থ সংস্থানের জন্য তিনি বিশেষ করে ধনী দেশগুলোকেই এ আহ্বান জানান। জেনেভায় বিশ্ব জলবায়ু সমেমলনের উদ্বোধনী দিনে গতকাল বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। এদিকে সমেমলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাস কমানোর জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছনোর ব্যাপারে অগ্রগতি হচ্ছে খুবই ধীরে। ধনী দেশগুলো নির্গমনের মাত্রা কমানোর ব্যাপারে উদাসীন। অপরদিকে উন্নয়নশীল দেশ ও বিকাশমান অর্থনীতিগুলো এটা মানতেই রাজী নয়, যে সমস্যা তারা সৃষ্টি করেনি তার সমাধানে সাহায্য করতে তাদের জ্বালানিব ব্যবহার কমানো উচিত। কিন্তু সমঝোতা একটা করতেই হবে কারণ আরো দেরি হলে তার অর্থ হবে চরম পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে এ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার জন্য মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। তবে নির্মম সত্য হল এর জন্য আমাদের মত দেশ খুব কমই দায়ি। এ সংকটের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমরা আনতর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অভিবাসন, পুনর্বাসন, অর্থায়ন, বিনিয়োগ এবং টেকনোলজির বিনিময়ের মাধ্যমে একত্রে কাজ করতে আগ্রহের কথা বলেন তিনি। তিনি তার সরকারের নেয় বিভিন্ন কর্মসূচির বর্ণনা তুলে ধরেন। নদী নাব্যতা, সম্রদ্রের পনির উচ্চতা বৃদ্ধিতে কৃষি ও বসতীর ক্ষতি, বাস্তুচ্যুতি, বন্যা প্রভৃতি বিষয়ে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে যে প্রভাব পড়েছে তার চিত্র তুলে ধরেন প্রধান মন্ত্রী। দক্ষিণে সম্রদ্র উপকূলে সবুজ বেষ্টনি গঠনের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা বিশ্বাস করি নিরাপদ আগামির এখনই বিনিয়োগের সময়। স্বাধীনতার পর হতে আমরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি। জলবাযু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জমি বনায়ন করা হবে। ১৪০০ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। নতুন আরো কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে যা বিভিন্ন সেবাকাজে ব্যবহৃত হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে মিলে এনজিও এবং কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনে একত্রে কাজ করার উদাহরণ হলো বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরির্বতনের ক্ষতি মোকাবিলায় বড় ধরনের তহবিল গঠন খুবই জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমাদের মিটিগেশন এবং অ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম বাসতবায়নের জন্য অর্থ একটি বড় ইসু। শুধু যেসব দেশ এই কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী তাদের যে এই নির্গমন কমাতে হবে তা নয়, তাদের তহবিল গঠনের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি হসতানতরে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ দারিদ্র বিমোচন ও স্থায়ী উন্নয়নের কল্পে এক অন্যরকম চ্যালেঞ্জের সমমুখিন রয়েছে। উন্নয়ন লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই আমরা বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমমুখিন হচ্ছি। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে এ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার জন্য মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। তবে নির্মম সত্য হলো এর জন্য আমাদের মত দেশ খুব কমই দায়ী। তবে আমাদের দায় না থাকলেও দায়িত্ব রয়েছে। এ সংকটের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমরা আনতর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অভিবাসন, পুনর্বাসন, অর্থায়ন, বিনিয়োগ এবং টেকনোলজির বিনিময়ের মাধ্যমে একত্রে কাজ করতে আগ্রহী। এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জ্ঞান কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জলবায়ু প্রক্রিয়াকে নিরাপত্তা দানের মাধ্যমে আমদের এ বসুন্ধরাকে শানিতর নীড় গড়ে তুলতে পারি যেখানে আমরা এবং আমাদের ভাবিষ্যৎ প্রজন্ম বসবাস করবে। প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের প্রসতাব করেন। শুধু তহবিল গঠনের ঘোষণা নয়, তা যেন সঠিকভাবে বাসতবায়িত হয় বিশ্ব নেতাদের প্রতি সে আহ্বানও জানান তিনি।
নির্ধারিত ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রীতি অনুসারে জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে রক্ষিত গোল্ডেন বুক-এ স্বাক্ষর করেছেন। এ সময় তিনি সেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গোটা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তিনি সেখানে লেখেন- পরিবেশগত ইসুটি বর্তমানে বৈশ্বিক এজেন্ডার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়ার ধরন বদলে ফেলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে এবং এর ফলে গোটা বিশ্বজুড়ে জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে হুমকির সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আবহাওয়া বিজ্ঞান, গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ ও বিনিময়ের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আনতর্জাতিক কোয়ালিশন গড়ে তুলতে হবে।
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ন‘টায় জেনেভা আনতর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে তাকে স্বাগত জানান বিশ্ব মেথোওরোলোজিকাল সংগঠনের মহাপরিচালক মিচেল জাররুড। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এমএ করিম, পররাষ্ট্র সচিব মোহামেমাদ মিজারুল কায়েস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় বিশ্ব জলবায়ু সমেমলনে যোগদানের জন্য ৫ দিনের সফরে জেনেভার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। গত সোমবার থেকে সুইজারল্যান্ডে শুরু হওয়া এই সমেমলনে প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সিদ্ধানত গ্রহণের জন্য জলবায়ু পূর্বাভাস ও তথ্য’। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডবিউএমও) এই সমেমলনের উদ্যোক্তা।
মূল সমেমলন শুরু হয়েছে গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সমেমলনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী সমেমলন ভেন্যুতে কলাম্বিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কসিসকো সানেতাস, সুইস প্রেসিডেন্ট হানস রুডলফ মার্জ, জাতিসংঘ প্রধান বান কি মুন, ইউএনডিপি প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক এবং জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির নির্বাহি পরিচালক অসিম স্টেইনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠান এবং জেনেভায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ৬ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্ব জলবায়ু সমেমলন ১৯৭৯ সালের ১২ থেকে ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি জেনেভায় এবং দ্বিতীয় বিশ্ব জলবায়ু সমেমলন ১৯৯০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর একই শহরে অনুষ্ঠিত হয়।
উত্তর মেরুর সফরে মেরু অঞ্চলের তুষার চাদর গলার দৃশ্য সচক্ষে দেখে সদ্য ফেরা জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার বক্তৃতায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বিপদের মোকাবিলায় একটা অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রুখতে ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই। কারণ আমাদের গ্রহ সুসপষ্ট বার্তা পাঠাচ্ছে যে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন যদি যথেষ্ট পরিমাণে না কমানো যায় তাহলে আমরা বিরাট একটা পরিবেশগত বিপর্যয়ের সমমুখীন হব।
ডিসেম্বরে কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সমেমলনের আগে তিনি বিশ্বনেতাদের মধ্যে এ বিষয় নিয়ে একটি আলোড়ন ফেলতে পারবেন বলে আশাবাদী বান বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন শুধু বাড়ছে না, ভীষণ দ্রুত হারে বাড়ছে। আর আমরা শুধু পরিবেশই পাল্টাচ্ছি না জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রকেও বদলে দিচ্ছে। শুষক অঞ্চল যা ২০০ কোটি মানুষের বাসভূমি সেখানে অভিবাসন বাড়ছে, বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাও। এছাড়া গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশ্ব নেতারা দ্রুত একটি চুক্তি করবেন বলে আশাবাদী বানকি মুন। তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে বাসতব পদক্ষেপ নেয়ার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।


জেনেভায় শেখ হাসিনাকে প্রবাসী বাঙালিদের ফুলেল শুভেচ্ছা, কাল সংবর্ধনা

ভিওবিডি, নিউইয়র্ক থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত ১ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রবাসী বাঙালিরা উঞ্চ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সেন্ট্রাল গ্র্যান্ড হোটেলে এসে পৌঁছলে প্রবাসী বাঙালিরা সারিবদ্ধভাবে ফুল দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গেই কুশল বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যেসব নেতা অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তারা হলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান শরীফ, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. অনিল সেন, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের নেতা শামিম হক, অস্ট্রিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এম নজরুল ইসলাম, রবিন মোহামমাদ আলী, সুইজার‌্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম, আব্দুর রশীদ, কাজী শওকত আসগর রিপন, বেলজিয়ামের আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রশীদ, পলিন এবং ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন।
এদিকে, জেনেভায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে জেনেভা এখন সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আগামীকাল ৪ সেপ্টেম্বর সেন্ট্রাল গ্র্যান্ড হোটেলের হলরুমে প্রবাসী বাঙালিদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিপুল সংবর্ধনার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা