সংসদে যোগ দিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংসদে যোগ দিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ভিওবিডি, ঢাকা থেকেসংসদে যোগ দিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিরোধী দলের সংসদে না আসার কোন কারণ নেই। যে কোন সমস্যাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। গণতন্ত্র নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পুনরুদ্ধারকৃত গণতন্ত্র কেউ যেন হরণ করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আনতর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তাঁর আমন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনীর ইফতার মাহফিলে যোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানান। প্রসঙ্গত আনতর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সহনশীলতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণে আমরা সচেষ্ট। কিন্তু এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, অতীতে যারা জনগণের অধিকার খর্ব করেছে তারা এখনও সক্রিয়। বিভিন্ন সময় অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা একটি বিশেষ শ্রেণী সৃষ্টি করেছে, যারা এখনও প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে। সুতরাং লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্র কেউ যাতে আবার হরণ করতে না পারে সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিডিআরে মর্মানিতক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা শানিতপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধান করেছি। এসব বিষয়ে জনগণকে আরো সচেতন থাকতে হবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের জরুরি অবস্থাকালীন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর বহু প্রসতাব দেয়া হয়েছিল। নির্বাচন না করলে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হবে। বিদেশে চলে যেতে হবে। নির্বাচনে দাঁড়ালে জীবনেও জামানত রক্ষা করতে পারবেন না এ ধরনের লোকদের প্রার্থী করার জন্য বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার দিয়েই যদি দেশের উন্নতি হতো তাহলে বাংলাদেশ তো এতদিনে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু তা হয়নি। উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের কোনো বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র কারো মালিকানাধীন বিষয় নয়। এটি জনগণের অধিকার। গত বছর যখন প্রথম দিবসটি পালন করা হয় তখন বাংলাদেশে পার্লামেন্ট বা গণতন্ত্র ছিল না। তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল একটি অনির্বাচিত সরকার। তারপরও তারা একটি নির্বাচন দিয়ে গেছে, যে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।
তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করার কিছুদিনের মাথায় রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে নিজেরা নেতা সাজে। একটি ধনিক শ্রেণী সৃষ্টি করে। একটি এলিট গ্রম্নপ সৃষ্টির মাধ্যমে তারা সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়। জনগণের অধিকারের প্রতি তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ থাকে না। আমরা সব সময়ই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি। তাই জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। এখন জনগণের আকাঙক্ষা এবং তাদের কাছে দেয়া আমাদের ওয়াদা পূরণ করতে হবে।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চিনি নিয়ে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। চিনি থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম মজুদ করে দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি জনগণকে বলবো আপনাদের কাছে এ সংক্রানত কোন তথ্য থাকলে আমাদের দেন। আমি আজকে (মঙ্গলবার) কিছু তথ্য পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই এই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের জনগণের সহায়তায়ই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। সুতরাং গণতন্ত্র রক্ষার ব্যাপারেও জনগণকে সচেতন থাকতে হবে।
বিরোধী দলকে সংসদে যোগদানের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সেনাকুঞ্জে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে বলেছিলাম, সংসদে আসুন। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সিপকারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করে নিন। সে কারণে সিপকারের পাশে তাকে বসার জায়গা দিয়েছিলাম। সিপকার নাকি তাকে হালিমে মুড়ি মাখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ পর্যায়ে সিপকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট বলেন, আমি ব্যর্থ হয়েছি এটা এখনও স্বীকার করতে চাই না। আমার চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী আবার বলেন, আপনি হালিম আর মুড়ির সাথে লেবু-কাঁচা মরিচ এগুলো দিয়েছিলেন কিনা? তিনি বলেন, সংসদ কক্ষের সিট নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই সমস্যা আছে। সিপকার এরই মধ্যে চিঠি পেয়েছেন তাদের মধ্যে কে বিরোধী দলীয় নেতার পাশে বসবেন আর কে বসবেন না সে বিষয়ে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সিপকার তো তবুও কথা বলতে দিচ্ছেন। আমাকে তো পার্লামেন্টে কথাই বলতে দেয়া হয়নি। ৭২ বার আমার মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। প্রতিবাদে সংসদের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার ফিরে এসেছি। কারণ আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি।
আনতর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এর আগে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ওয়ান ইলেভেনে জাতিসংঘের ভূমিকা কি ছিল তাও দেখা দরকার। সে সময় এই সংসদকে বানানো হয়েছিল কারাগার। এখানে ‘কারজাই মার্কা’ শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তখন কি ভূমিকা ছিল জাতিসংঘের? শেখ সেলিমের বক্তব্যের এ পর্যায়ে সিপকার আব্দুল হামিদ বলেন, ভাগ্য ভালো যে, তখন সিপকারকে জেল সুপার করা হয়নি। একই প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ১/১১ চক্রানত বাসতবায়নের ক্ষেত্রে এখানকার জাতিসংঘ অফিস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংসদ কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য যারা দায়ী ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বক্তব্যে হিংসা, বিদ্বেষ ও অতীত ভুলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান। বিষয়টির ওপর সাধারণ আলোচনায় আরও অংশ নেন পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক আইন মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু ও অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুশ শহিদের উত্থাপিত ‘গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সহনশীলতা’ শীর্ষক প্রসতাবটির ওপর সাধারণ আলোচনার পর কণ্ঠভোটে এটি সংসদে গৃহীত হয়।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা