আওয়ামী লীগ সরকারের ১২ মাসের হিসাব-নিকাশ
প্রফেসর ড. মোঃ আসলাম ভূইয়া
গণতান্ত্রিক সরকারের জবাবদিহিতা করতে হয় তাদের কার্যক্রমের জন্য, রাজনৈতিক দল ড়্গমতায় আসার পূর্বে জনগণকে দেয়া তাদের অঙ্গীকার যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা জনগণ অবশ্যই বিচার-বিশ্লেষণ করার অধিকার রাখে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে এ জবাবদিহিতার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনের পূর্বে প্রথমবারের মতো ইশতেহার প্রকাশ করে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করে। অতএব আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ শাসনের দড়্গতা ও সুব্যবস্থাপনার হিসাব-নিকাশ করার সময় উপরোক্ত প্রেড়্গাপট বিচেনায় রাখা যুক্তিযুক্ত মনে করি। ইশতেহারে ঘোষিত কর্মসূচির প্রাধান্য ক্রমানুসারে কতোটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছে তা ১ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার মুর্হূতে মূল্যায়ন করা জনগণের অধিকার। মূল্যায়ন করার ড়্গেত্রে সবাইকে ড়নলবপঃরাব হতে হবে। কোনো তথ্যের বিকৃতি কিংবা অতিরঞ্জন করা সমীচীন হবে না। এ বিষয় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বিকাশমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আলোকে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিরাজমান অব্যবস্থাকে বিবেচনায় রেখে এ মূল্যায়ন করাই হবে বাঞ্ছনীয়। সামাজিক কল্যাণকর রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র যে ভূমিকা পালন করে অনুরূপ ভূমিকা প্রাথমিক লুম্পেন বুর্জোয়া ব্যবস্থাপনায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা নেতিবাচক হওয়াটাই স্বাভাবিক। ইতিহাস তাই বলে। এর ব্যত্যয় ঘটেছে বলে কোনো দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। সীমাহীন সমস্যা জর্জরিত একটি তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশে সকল সমস্যা সরকার ১ বছরে সমাধান করে ফেলবে এমন আশা করা সম্পূর্ণরূপে মূর্খতার শামিল। রাজনৈতিক বৈপরীত্য থাকলে ও এমন দূরাশা জাগিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করাও সম্পূর্ণ যুক্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য। ১. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ :বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থাধীনে দুর্নীতি সম্পূর্ণ নির্মূল করা অলীক চিন্তা। কোনো জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান মানুষ এরূপ অলীক দাবি করবে না কিন্তু দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। দুর্নীতি সমাজ ব্যবস্থাকে আঘাত করবে না এবং দৃশ্যমানও হবে না এমন অবস্থায় নেয়া সম্ভব। ১২ মাসে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়নি। সেজন্য বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দুর্নীতিতে ১নং রাষ্ট্র আর নয়। এখন বাংলাদেশের অবস্থান ১০তম। দুর্নীতিদমন সংস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন। সরকার দুর্নীতি দমন সংস্থার ওপর কোনোরকম হস্তড়্গেপ করছে না। অর্থাৎ দুর্নীতি দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে ধ্বংস করার কোনো সুযোগ পাবে না। পুঁজিবাদী দেশেও দুর্নীতি আছে তবে যৌক্তিক পর্যায়। বাংলাদেশ গরিব দেশ দুর্নীতি থাকবে। তবে গ্রহণযোগ্য স্তরে থাকবে। এটাই এ সরকারের জন্য একটি সাফল্য। দেশের সম্পদ পাচার করার মতো দুর্নীতি যাতে না হয় সেদিকে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সরকারের সাফল্যের খাতায় এ হিসাব অবশ্যই লিপিবদ্ধ যোগ্য।২. অবকাঠামো নির্মাণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা :সার্বিক উন্নয়নের জন্য যে সকল অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন, তার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম। শিল্পায়ন এবং উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এ বিবেচনায় সরকার ১ বছরের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কিছু পদড়্গেপ নিয়েছে। সরকার বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েকে চার লেনে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডার ও কার্যাদেশ প্রদান করেছে। সহসা নির্মাণ কাজ শুরু হবে।এছাড়াও ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের (স্থলপথে) অর্থাৎ পড়হহবপঃরারঃু বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক আলাপ-আলোচনায় সমঝোতা হয়েছে। দীর্ঘ ৩৮ বছরের একটি সমস্যা সমাধান হতে চলেছে। সরকার বসে নেই কর্মতৎপরতা আছে এবং সফলতাও আছে। ঢাকাসহ বৃহত্তর নগরগুলোর যানজট নিরসনে একাধিক পদড়্গেপ নিয়েছে। যেমন, ঊীঢ়ৎবংং ডধু, ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। রেল পথের উন্নয়নের কাজও চলছে। পাতাল রেল নির্মাণের ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে সরকারের সাফল্য রীতিমত ঈর্ষণীয়। সকল প্রকার পরিকল্পনা, অনুমোদন, দরপত্রের খসড়াও, সেতুর নমুনা সম্পন্ন হয়েছে, অর্থায়নের ব্যবস্থা হয়েছে। এ বিশাল সেতু নির্মাণের কাজ আগামী বছরে শুরু হবে। সরকারের মেয়াদকালে নির্মাণ কাজও সম্পন্ন করতে সরকার আশাবাদী।৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি :বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সকল উন্নয়ন, বিশেষ করে শিল্প-কারখানা ও বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও গ্যাস। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বহুল এবং সময় সাপেড়্গ ও বটে। রাতারাতি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় না। বিগত শাসনামলে আওয়ামী লীগ সরকার অতিরিক্ত ২৫০০ মে. ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছিল। এরপর আর বিদ্যুৎ খাতের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। জরুরি ভিত্তিতে সরকার এক বছরের মধ্যে প্রায় ৩৫০ মে. ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছে। গ্যাস উত্তোলনের ও প্রক্রিয়া চলছে। আগামী বছর বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার কাজও শুরু হবে। সরকার ১২ মাসে যে কাজ করেছে বিগত সরকারগুলো তা ৭ বছরেও করতে পারেনি। এটা সরকারের সফলতার স্বাড়্গর বটে।৪. শিড়্গানীতি প্রণয়ন : দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দেশে নতুন শিড়্গানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশ্চাৎপদ শিড়্গানীতিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে সড়্গম এমন একটি নতুন শিড়্গানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত শিড়্গানীতি বাস্তবায়িত হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাঠ্যসূচিতে প্রাধান্য পাবে। বিগত শাসনামলে আওয়ামী লীগ সরকার ইতিমধ্যে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিল যা প্রণীত শিড়্গানীতি সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। স্কুল-কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। শিড়্গা নাগরিক অধিকার এ কথা স্মরণ রেখেই শিড়্গানীতি গ্রহণ করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা বেতনে শিড়্গার সুযোগ পাবে সবাই। ছাত্রীরা উপবৃত্তি যথারীতি পাবে। নারী শিড়্গা উৎসাহিত করার জন্যই এ নীতিমালা গৃহীত হয়েছে। ফলে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিড়্গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সকল ধরনের শিড়্গাকে এক করা হয়েছে। এতে শিড়্গা বৈষম্য হ্রাস পাবে। সবার জন্য শিড়্গা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২ মাসে এ কঠিন কাজটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে যা ৩৮ বছরে সম্ভব হয়নি। সরকারের শিড়্গা কর্মসূচিকে ব্যর্থ করার জন্য দুর্বৃত্তরা কেন্দ্রীয় পুস্তুক গুদামে অগ্নিসংযোগ করে প্রাথমিক শিড়্গার্থীদের জন্য সংরড়্গিত পুস্তক পুড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু সরকার যথাসময়ে পুস্তক বিতরণ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এড়্গেত্রেও সরকারের সাফল্য উলেস্নখযোগ্য।৫. অর্থনীতি :অর্থ ব্যবস্থায় সরকারের সাফল্য তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন- মুদ্রানীতি যথেষ্ট সাফল্যের স্বাড়্গর রেখেছে। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা ও সংকটে যখন পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিপর্যয় ঘটেছে, এমনকি প্রাচ্যের বহু দেশের মুদ্রামানে ধস নামে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে সবাই আশঙ্কা করেছিল বাংলাদেশে এর প্রভাব তীব্র হবে এবং মুদ্রার মানের ধস নামবে। কিন্তু তা হয়নি। মুদ্রার মান যথার্থভাবে সংরড়্গিত আছে। বরং আগের চাইতে শক্তিশালী হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হারও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সড়্গম হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে বেতন বৃদ্ধির পরও মুদ্রাস্ফীতি ঘটেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দশ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।৬. কৃষি : সরকারকে খাদ্যশস্য ব্যাপকভাবে আমদানি করতে হয়নি। অভ্যন্তরীণ কৃষিনীতি সফল হওয়াতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য ঘাটতি পূরণ হয়েছে। আমদানি করার প্রয়োজন হয়নি। কৃষি খাতে ভর্তুকি, ঋণ সহজলভ্য সর্বোপরি ডিজেলের মূল্য হ্রাস এবং অর্ধেক মূল্যে সার সরবরাহসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে খাদ্য মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ড়্গমতার মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যহ্রাস সরকারের একটি বড় ধরনের অঙ্গীকার ছিল। খাদ্য অভাব লাঘব করার জন্য সরকার ভিজিএফ, ভিজিডি কর্মসূচির মাধ্যমে ১২ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। এখন দেশে মঙ্গা শব্দটি আর উচ্চারিত হয় না। এটা অবশ্যই সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও সফলতা।৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগ :একথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে জলবায়ু পরিবর্তনের এর কারণে বহু দেশে খরা হয়েছে। খরার কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেমন চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল ইত্যাদি ফসল ভালো না হওয়াতে সারা বিশ্বে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও আবহাওয়ার পরিবর্তনে খরা-অতিবৃষ্টিসহ সাইক্লোন যেমন- সিডর, আইলা ইত্যাদি দেশের দড়্গিণাঞ্চলে ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতি করেছে। মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ফসল নষ্ট হয়েছে, গবাদি-পশুর সমূহ ড়্গতি হয়েছে। মোট কথা সম্পদহানি ঘটেছে। এ ধরনের প্রতিকূল অবস্থা সরকারের প্রণীত কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সরকার দুর্যোগপূর্ব এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ ড়্গতি অনেকাংশে হ্রাস করতে পরবর্তীতে সড়্গম হয়। ড়্গতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্য প্রদান করার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে। এ উদ্যোগ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের কার্যক্রমকে বিশ্বে দুর্যোগ মোকাবেলার মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে।৮. সুশাসন ও স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীয়করণ :সরকার জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সকল মন্ত্রণালয়ের জন্য সংসদীয় কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এ সংসদীয় কমিটি কাজ করছে। প্রত্যেক সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের সাংসদ আছেন। শুধু তাই নয় এবারই প্রথম সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধীদলীয় সাংসদকে করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটা অবশ্যই একটি গুণগত পরিবর্তন। স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য দীর্ঘদিন পর উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। সরকার স্থানীয় মাঠ পর্যায় সুশাসন কার্যকর করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ আইন প্রণয়ন করেছে।৯. বিচার ব্যবস্থা : বিচারিক কাজ আইনজ্ঞ জুডিশিয়াল ক্যাডার দ্বারা সম্পন্ন করা হবে। নির্বাহী বিভাগ বিচারকার্যে হস্তড়্গেপ করতে পারবে না। এখন কার্যকরভাবে বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রশাসন থেকে আলাদা হয়েছে।জাতির জনকের পরিবার পরিজনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অসমাপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত আত্বস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে। দেশে যে আইনের শাসন আছে তা প্রতিষ্ঠিত করে এ সরকার বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের আইন-আদালতের অবস্থান সমুন্নত করছে। দেশের ভাবমূর্তিও পুনরুদ্ধার করেছে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য অনেক দূর এগিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অপরাধের বিলম্বিত বিচার কাজ অবশেষে শুরু করতে যাচ্ছে। সরকারের প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হবে।১০. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ প্রবাহ :সরকার সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়। তথ্য উন্মুক্ত করা এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহের জন্য সরকার ইতিমধ্যে তথ্য কমিশন গঠন করেছে। প্রিন্টিং মিডিয়া অথবা ইলেকট্রিক মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সরকার বিগত সরকার অনুমোদিত কোনো গণমাধ্যমের ওপর হস্তড়্গেপ বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনি। এটাই সরকারের সফলতার স্বাড়্গর। ১১. পররাষ্ট্রনীতি ও বিশ্ব সমাজে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি : বাংলাদেশ সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সড়্গম হয়েছে। বিশ্বমন্দার কারণে যতোসংখ্যক বিদেশে কর্মরত শ্রমিকের দেশে ফেরত আসার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রোধ করা হয়েছে। বরং আরো নতুন শ্রম বাজার বিস্তার হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটেছে। অনতিদূরে বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরো নিবিড় হবে বলে ইতিমধ্যে সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। কয়েকটি নতুন চুক্তিও হবে ভারতের সঙ্গে যা দু দেশেরই স্বার্থ সংরড়্গণ করবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক নতুন দিগন্ত উন্মেচন করছেন। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংঘটিত দুর্যোগ মোকাবেলা বাংলাদেশ একটি আদর্শ মডেল হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। এ সবই পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য।ব্যর্থতা :ক. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের অদড়্গতার কারণে এবং বিশ্ববাজারের প্রভাবে দ্রব্যমূল্য যতোটা নিয়ন্ত্রিত ছিল তা স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। সরকারের সফলতা যতোটা উজ্বল হয়ে জনগণকে আলোকিত করেছিল তা কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়েছে। এ বাস্তবতা সরকারকে স্বীকার করতে হবে। খ. জনসংখ্যা : জনসংখ্যা বাধাহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধে সরকার কোনো কার্যকর পদড়্গেপ গ্রহণ করেনি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ কোনো অপঃরড়হ চৎড়মৎধসসব গ্রহণ করেনি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাংলাদেশের ১নং সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের যথোপযুক্ত পদড়্গেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল। গ. আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ : আইন-শৃঙ্খলা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, বিশেষ করে জেলা পর্যায় সরকার সফল, বড় বড় নগরগুলোতে এতোটা সফল নয়। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি বৃহৎ নগরগুলোতে প্রত্যাশিতভাবে কমেনি বা হ্রাস পায়নি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এখনো নীরবে চলছে। পুলিশ কার্যকর ভূমিকা অর্থাৎ নিরপেড়্গ ভূমিকা গ্রহণ করলে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে ১২ মাসের সরকারের পালস্না সফলতায় ভারী তবে ব্যর্থতার পালস্না কম হলেও গুরুত্বহীন নয়। সরকারকে আরো মনোযোগী হতে হবে। প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় দড়্গতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের হাতে ৪ বছর সময় আছে। মানুষের প্রত্যাশা অবশেষে ইশতেহার বাস্তবায়নে সরকার সফল হবে। রূপকল্প ২০২১ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সড়্গম হবে। রূপকল্প অর্জন করতে সড়্গম হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হবে। প্রফেসর ড. মোঃ আসলাম ভূইয়া : শিড়্গাবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী।