বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি
শেখ মুজিবের নাম থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি বাদ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ তারিখ নেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি
অভিজিত ভট্টাচার্য: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ (১-৭ খণ্ড) গ্রন্থের কিছু কিছু অংশে ইতিহাস বিকৃতি, তথ্যবিভ্রানিত্ম, অতিরঞ্জন, অবমূল্যায়ন, পুনরাবৃত্তি, ভাষার ত্রুটিবিচ্যুতি ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কিত বইটি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে আনুপূর্বিক সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন ছাড়া বইটি কোথাও বিতরণ করা সমীচীন নয়।
পাঠ্যপুসত্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্বলিত বিষয় সংযোজন সংক্রানত্ম কমিটি তাদের খসড়া প্রতিবেদনে এ মতামত দিয়েছে। আজকালের মধ্যে প্রতিবেদনটি শিক্ষা সচিব সৈয়দ আতাউর রহমানের কাছে জমা দেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাসদরের শিক্ষা পরিদফতর থেকে ২০০৮ সালে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ নামে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। মোট ৭টি খণ্ডে ৮টি বই প্রকাশ করা হয়। এগুলো পরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পাদিত ওই বইয়ের যথার্থতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২০০৯ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে একইবছরের ২৮ জুলাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই বইয়ের পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য চিঠিতে বলা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য পাঠ্যপুসত্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত বিষয় সংযোজন কমিটিকে দায়িত্ব দেয়। ৮ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং সদস্য সচিব হচ্ছেন নায়েমের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক জিয়াউল হাসান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মু. নাজমুল হক, অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বইটির প্রথম খণ্ডের প্রথম পর্ব বইয়ের ১০৮ নম্বর পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়ার ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বইয়ে সবসময় ‘শেখ মুজিব’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকাকে সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। একই খণ্ডের একই পর্বের ৩০৬ নম্বর পৃষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার সম্পর্কে তথ্যের বিভ্রানিত্ম রয়েছে। এ পৃষ্ঠায় মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনের কথা উলেস্নখ করা হলেও ‘মুজিবনগর’ নামটি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি প্রবাসী সরকারের ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগের দিকগুলো গুরুত্ব পায়নি। একই খণ্ড ও একই পর্বের ৬৬৩ নম্বর পৃষ্ঠা ও একই খণ্ডের দ্বিতীয় পর্বের ১ হাজার ৩৫৪ নম্বর পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্প্রচারের তারিখ অনুলেস্নখিত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বইটি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রণীত হওয়ায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কথাই বেশি বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তির ভূমিকা গুরুত্বসহকারে স্থান পায়নি। এছাড়া বইটি রচনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে উলেস্নখ নেই। বইটির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যেসব লেখক, সম্পাদক ও বিশেষজ্ঞের নাম থাকা দরকার তা নেই। ফলে বইয়ের তথ্য উপস্থাপন, ধারাবাহিকতা, ভাষারীতি, বানান, উদ্ধৃতি নির্দেশের ক্ষেত্রে ত্রুটি পাওয়া গেছে। এমনকি প্রথম খণ্ডের প্রথম পর্বের উপসংহার আর দ্বিতীয় পর্বের উপসংহার একই হয়েছে। সম্পাদনা: হাসান জাকির
অভিজিত ভট্টাচার্য: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ (১-৭ খণ্ড) গ্রন্থের কিছু কিছু অংশে ইতিহাস বিকৃতি, তথ্যবিভ্রানিত্ম, অতিরঞ্জন, অবমূল্যায়ন, পুনরাবৃত্তি, ভাষার ত্রুটিবিচ্যুতি ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কিত বইটি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে আনুপূর্বিক সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন ছাড়া বইটি কোথাও বিতরণ করা সমীচীন নয়।
পাঠ্যপুসত্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্বলিত বিষয় সংযোজন সংক্রানত্ম কমিটি তাদের খসড়া প্রতিবেদনে এ মতামত দিয়েছে। আজকালের মধ্যে প্রতিবেদনটি শিক্ষা সচিব সৈয়দ আতাউর রহমানের কাছে জমা দেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাসদরের শিক্ষা পরিদফতর থেকে ২০০৮ সালে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ নামে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। মোট ৭টি খণ্ডে ৮টি বই প্রকাশ করা হয়। এগুলো পরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পাদিত ওই বইয়ের যথার্থতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২০০৯ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে একইবছরের ২৮ জুলাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই বইয়ের পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য চিঠিতে বলা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য পাঠ্যপুসত্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত বিষয় সংযোজন কমিটিকে দায়িত্ব দেয়। ৮ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং সদস্য সচিব হচ্ছেন নায়েমের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক জিয়াউল হাসান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মু. নাজমুল হক, অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বইটির প্রথম খণ্ডের প্রথম পর্ব বইয়ের ১০৮ নম্বর পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়ার ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বইয়ে সবসময় ‘শেখ মুজিব’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকাকে সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। একই খণ্ডের একই পর্বের ৩০৬ নম্বর পৃষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার সম্পর্কে তথ্যের বিভ্রানিত্ম রয়েছে। এ পৃষ্ঠায় মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনের কথা উলেস্নখ করা হলেও ‘মুজিবনগর’ নামটি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি প্রবাসী সরকারের ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগের দিকগুলো গুরুত্ব পায়নি। একই খণ্ড ও একই পর্বের ৬৬৩ নম্বর পৃষ্ঠা ও একই খণ্ডের দ্বিতীয় পর্বের ১ হাজার ৩৫৪ নম্বর পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্প্রচারের তারিখ অনুলেস্নখিত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বইটি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রণীত হওয়ায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কথাই বেশি বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তির ভূমিকা গুরুত্বসহকারে স্থান পায়নি। এছাড়া বইটি রচনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে উলেস্নখ নেই। বইটির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যেসব লেখক, সম্পাদক ও বিশেষজ্ঞের নাম থাকা দরকার তা নেই। ফলে বইয়ের তথ্য উপস্থাপন, ধারাবাহিকতা, ভাষারীতি, বানান, উদ্ধৃতি নির্দেশের ক্ষেত্রে ত্রুটি পাওয়া গেছে। এমনকি প্রথম খণ্ডের প্রথম পর্বের উপসংহার আর দ্বিতীয় পর্বের উপসংহার একই হয়েছে। সম্পাদনা: হাসান জাকির