৩৫ বছর পর বাংলায় ভাষণ শুনবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ
৩৫ বছর পর বাংলায় ভাষণ শুনবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৫ (টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দীর্ঘ ৩৫ বছর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিতে যাচ্ছেন সরকার প্রধান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের ৬৪-তম অধিবেশনে এ ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অষ্টম বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে তার ভাষণ দেওয়ার সময় নির্ধারিত আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তবে জাতিসংঘের কোনও অধিবেশনে বাংলায় ভাষণদানকারী সরকারপ্রধানদের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তি হবেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধিদের অন্যতম ইফতেখার আহমদ চৌধুরী শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিতে যাচ্ছেন।" বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ ডেস্কের তখনকার মহাপরিচালক ইফতেখার চৌধুরী। এ অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে এমিরেটস্ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়েন তিনি। আগামী ১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
সুন্দরবন কক্সবাজার ও হিমালয়ে প্যাকেজ ট্যুরিজমের প্রসতাব
।। নিউইয়র্ক থেকে বাসস ।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এশিয়ায় সরাসরি বিনিয়োগের ৰেত্র (এফডিআই) হিসাবে বাংলাদেশকে বিবেচনায় এনে এদেশে অধিক বিনিয়োগের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান জানান। বিনিয়োগের ৰেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রম্নতিও দেন তিনি। এর আগে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনের পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল ও গত বুধবার মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে দ্বিপাৰিক বিষয়াদি নিয়ে বৈঠক করেন। গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন ও শানিৱ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অগ্রগতি অর্জনে ঢাকা ও কাঠমন্ডু একযোগে কাজ করবে বলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। গত বুধবারের বৈঠকে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য তহবিল সংগ্রহে দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদান করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আনৱর্জাতিক ও বহুজাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মতো তিনটি গুরম্নত্বপূর্ণ দিক বাংলাদেশের রয়েছে। তা হ"েছ-সসৱা শ্রম বাজার, ১৫ কোটি জনগণের বিশাল অভ্যনৱরীণ বাজার এবং এশিয়া অঞ্চলের প্রায় তিনশ’ কোটি মানুষের বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশে ৭০ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ আশা করছে। তিনি বলেন, বিশ্বের নিম্নতম উৎপাদন খরচের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের বাজারে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি এশিয়ার অন্যান্য ব্যয়বহুল দেশের কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে স'ানানৱরের অনুকূল পরিসি'তি লৰ্য করা যা"েছ।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বহির্বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা সম্ভবত সঠিকভাবে পৌঁছেনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাপক জনসংখ্যা অধ্যুষিত, দারিদ্র্যপীড়িত ও দুর্নীতিগ্রসৱ দেশ হিসাবে পরিচিতি পেয়ে থাকতে পারে। শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, প্রবৃদ্ধি হার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (জিডিপি) এক শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম মজবুত অর্থনীতি হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে সৰম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি উলেস্নখ করেন, বিগত ২০০৮ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শেয়ার বাজার গত বছর যথেষ্ট চাঙ্গা ছিল এবং চলতি বছর একটি উন্নত, সম্ভাবনায়ময় বাজার হিসাবে নিজের অবস'ানকে ধরে রাখতে সৰম হয়েছে।
‘বাংলাদেশ কেন বিদেশী বিনিয়োগের জন্য পরবর্তী আকর্ষণীয় ৰেত্র’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি কম্পিউটার উপস'াপনার মাধ্যমে প্রবাসী নাগরিকসহ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক চিত্র উপস'াপন করেন।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ মিশনের উদ্যোগে ট্রান্স ফাস্টের সহযোগিতায় এই মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তৃতা দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স'ায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস'ানরত বাংলাদেশের উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক উপসি'ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সভার শুরম্নতে সমবেত প্রবাসী নাগরিকদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশের রফতানি ও জিডিপির অনুপাত সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তা প্রায় শতকরা ১৫ ভাগে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দুইটি প্রধান ভিত্তি হ"েছ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রফতানি এবং প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ যা দেশের অর্থনীতিতে ১০ মিলিয়ন ডলার অবদান রাখছে। বর্তমানে জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ মিলিয়ন ডলারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান দ্রম্নত বর্ধনশীল শ্রমিক সরবরাহের ৰমতাসম্পন্ন অত্যনৱ ইতিবাচক বিনিয়োগ পরিসি'তি সম্পর্কে প্রবাসীদের আরও ইতিবাচক ধারণা থাকা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রসৱাবকে ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক ‘লিডিং’ বিনিয়োগকারি ব্যাংক গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হার ধরে রাখতে সৰম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সৰম হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী নাগরিকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’র ডেপুটি এডিটর কলাম মারফিকে সাৰাৎকার দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল ব্যসৱ সময় কাটান। তিনি সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনে অংশ নেন। শেখ হাসিনা ২৬ সেপ্টেম্বর এই অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে দ্বিপাৰিক বৈঠক অনুষ্ঠানের স'লে নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাৰিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং এ অঞ্চলের শানিৱ, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাৰরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শানিৱ চুক্তির উলেস্নখ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে স'ায়ী শানিৱ ও সি'তিশীলতা বজায় রাখা এবং নেপালের গণতান্ত্রিক ভিত্তি আরো জোরদার করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার শানিৱ ও সি'তিশীলতা বজায় রাখার ৰেত্রে নেপালকে সাহায্য করতে পারে। পূর্ববর্তী মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামে শানিৱ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাফল্যের কথা উলেস্নখ করে মাধব কুমার বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৰেত্রে বাংলাদেশের একটি গৌরবময় অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই নেপালের গণতান্ত্রিক ভিত্তি জোরদারের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সহায়তা দিতে নেপালের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।
দ্বিপাৰিক ব্যবসা ও বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স'ান পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দৰিণ এশীয় অঞ্চলের বহু কাঙিৰত অর্থনৈতিক মুক্তি ত্বরান্বিত করতে নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেন। তিনি মংলা বন্দরের আধুনিকায়নের লৰ্যে তার সরকারের উদ্যোগের ব্যাপারে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, এতে আঞ্চলিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়া ছাড়াও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলো লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের লৰ্যসমূহ অর্জনের জন্য এ অঞ্চলে পানি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেছেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী দুইটি দেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে পর্যটন প্যাকেজ চালু করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ধরনের প্যাকেজ দুই রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং হিমালয়ে প্যাকেজ ট্যুরিজম চালু করলে তা দুই দেশের পর্যটন শিল্পের জন্যই লাভজনক আয়ের ৰেত্র হতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপালের শিৰার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিদ্যায় মানসম্মত শিৰা গ্রহণ করতে পারে।
বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারম্নল কায়েস এ অনুষ্ঠানে উপসি'ত ছিলেন।
গত বুধবার জাতিসংঘ সদরদফতরে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাৰিক বৈঠককালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশ নয় বরং সারা বিশ্বকে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রতিকূল প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করেছেন। এ প্রসঙ্গে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট জেনেভায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় আনৱর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণের উলেস্নখ এবং উন্নত দেশসমূহের অত্যধিক কার্বন নির্গমনের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লৰ্যে সম্মেলনে একটি দূরদর্শী ভূমিকা পালন করায় তার প্রশংসা করেন। প্রেসিডেন্ট নাশিদ উ"চ শিৰা সম্প্রসারণে তার সরকারের পরিকল্পনার উলেস্নখ করে তার দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের আরো সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, শেখ হাসিনা মালদ্বীপে উ"চ শিৰা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে মোহাম্মদ নাশিদ বলেন,তার দ্বীপরাষ্ট্রে গণতন্ত্র আরো জোরদারে বাংলাদেশ সহায়তা দিতে পারে। বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও পররাষ্ট্র সচিব মিজারম্নল কায়েস এ সময় উপসি'ত ছিলেন।
সুন্দরবন কক্সবাজার ও হিমালয়ে প্যাকেজ ট্যুরিজমের প্রসতাব
।। নিউইয়র্ক থেকে বাসস ।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এশিয়ায় সরাসরি বিনিয়োগের ৰেত্র (এফডিআই) হিসাবে বাংলাদেশকে বিবেচনায় এনে এদেশে অধিক বিনিয়োগের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান জানান। বিনিয়োগের ৰেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রম্নতিও দেন তিনি। এর আগে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনের পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল ও গত বুধবার মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে দ্বিপাৰিক বিষয়াদি নিয়ে বৈঠক করেন। গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন ও শানিৱ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অগ্রগতি অর্জনে ঢাকা ও কাঠমন্ডু একযোগে কাজ করবে বলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। গত বুধবারের বৈঠকে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য তহবিল সংগ্রহে দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদান করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আনৱর্জাতিক ও বহুজাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মতো তিনটি গুরম্নত্বপূর্ণ দিক বাংলাদেশের রয়েছে। তা হ"েছ-সসৱা শ্রম বাজার, ১৫ কোটি জনগণের বিশাল অভ্যনৱরীণ বাজার এবং এশিয়া অঞ্চলের প্রায় তিনশ’ কোটি মানুষের বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশে ৭০ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ আশা করছে। তিনি বলেন, বিশ্বের নিম্নতম উৎপাদন খরচের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের বাজারে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি এশিয়ার অন্যান্য ব্যয়বহুল দেশের কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে স'ানানৱরের অনুকূল পরিসি'তি লৰ্য করা যা"েছ।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বহির্বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা সম্ভবত সঠিকভাবে পৌঁছেনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাপক জনসংখ্যা অধ্যুষিত, দারিদ্র্যপীড়িত ও দুর্নীতিগ্রসৱ দেশ হিসাবে পরিচিতি পেয়ে থাকতে পারে। শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, প্রবৃদ্ধি হার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (জিডিপি) এক শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম মজবুত অর্থনীতি হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে সৰম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি উলেস্নখ করেন, বিগত ২০০৮ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শেয়ার বাজার গত বছর যথেষ্ট চাঙ্গা ছিল এবং চলতি বছর একটি উন্নত, সম্ভাবনায়ময় বাজার হিসাবে নিজের অবস'ানকে ধরে রাখতে সৰম হয়েছে।
‘বাংলাদেশ কেন বিদেশী বিনিয়োগের জন্য পরবর্তী আকর্ষণীয় ৰেত্র’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি কম্পিউটার উপস'াপনার মাধ্যমে প্রবাসী নাগরিকসহ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক চিত্র উপস'াপন করেন।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ মিশনের উদ্যোগে ট্রান্স ফাস্টের সহযোগিতায় এই মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তৃতা দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স'ায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস'ানরত বাংলাদেশের উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক উপসি'ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সভার শুরম্নতে সমবেত প্রবাসী নাগরিকদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশের রফতানি ও জিডিপির অনুপাত সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তা প্রায় শতকরা ১৫ ভাগে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দুইটি প্রধান ভিত্তি হ"েছ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রফতানি এবং প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ যা দেশের অর্থনীতিতে ১০ মিলিয়ন ডলার অবদান রাখছে। বর্তমানে জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ মিলিয়ন ডলারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান দ্রম্নত বর্ধনশীল শ্রমিক সরবরাহের ৰমতাসম্পন্ন অত্যনৱ ইতিবাচক বিনিয়োগ পরিসি'তি সম্পর্কে প্রবাসীদের আরও ইতিবাচক ধারণা থাকা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রসৱাবকে ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক ‘লিডিং’ বিনিয়োগকারি ব্যাংক গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হার ধরে রাখতে সৰম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সৰম হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী নাগরিকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’র ডেপুটি এডিটর কলাম মারফিকে সাৰাৎকার দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল ব্যসৱ সময় কাটান। তিনি সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনে অংশ নেন। শেখ হাসিনা ২৬ সেপ্টেম্বর এই অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে দ্বিপাৰিক বৈঠক অনুষ্ঠানের স'লে নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাৰিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং এ অঞ্চলের শানিৱ, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাৰরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শানিৱ চুক্তির উলেস্নখ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে স'ায়ী শানিৱ ও সি'তিশীলতা বজায় রাখা এবং নেপালের গণতান্ত্রিক ভিত্তি আরো জোরদার করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার শানিৱ ও সি'তিশীলতা বজায় রাখার ৰেত্রে নেপালকে সাহায্য করতে পারে। পূর্ববর্তী মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামে শানিৱ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাফল্যের কথা উলেস্নখ করে মাধব কুমার বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৰেত্রে বাংলাদেশের একটি গৌরবময় অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই নেপালের গণতান্ত্রিক ভিত্তি জোরদারের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সহায়তা দিতে নেপালের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।
দ্বিপাৰিক ব্যবসা ও বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স'ান পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দৰিণ এশীয় অঞ্চলের বহু কাঙিৰত অর্থনৈতিক মুক্তি ত্বরান্বিত করতে নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেন। তিনি মংলা বন্দরের আধুনিকায়নের লৰ্যে তার সরকারের উদ্যোগের ব্যাপারে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, এতে আঞ্চলিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়া ছাড়াও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলো লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের লৰ্যসমূহ অর্জনের জন্য এ অঞ্চলে পানি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেছেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী দুইটি দেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে পর্যটন প্যাকেজ চালু করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ধরনের প্যাকেজ দুই রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং হিমালয়ে প্যাকেজ ট্যুরিজম চালু করলে তা দুই দেশের পর্যটন শিল্পের জন্যই লাভজনক আয়ের ৰেত্র হতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপালের শিৰার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিদ্যায় মানসম্মত শিৰা গ্রহণ করতে পারে।
বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারম্নল কায়েস এ অনুষ্ঠানে উপসি'ত ছিলেন।
গত বুধবার জাতিসংঘ সদরদফতরে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাৰিক বৈঠককালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশ নয় বরং সারা বিশ্বকে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রতিকূল প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করেছেন। এ প্রসঙ্গে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট জেনেভায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় আনৱর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণের উলেস্নখ এবং উন্নত দেশসমূহের অত্যধিক কার্বন নির্গমনের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লৰ্যে সম্মেলনে একটি দূরদর্শী ভূমিকা পালন করায় তার প্রশংসা করেন। প্রেসিডেন্ট নাশিদ উ"চ শিৰা সম্প্রসারণে তার সরকারের পরিকল্পনার উলেস্নখ করে তার দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের আরো সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, শেখ হাসিনা মালদ্বীপে উ"চ শিৰা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে মোহাম্মদ নাশিদ বলেন,তার দ্বীপরাষ্ট্রে গণতন্ত্র আরো জোরদারে বাংলাদেশ সহায়তা দিতে পারে। বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও পররাষ্ট্র সচিব মিজারম্নল কায়েস এ সময় উপসি'ত ছিলেন।
সংবিধানের কবর রচনা করেছিলেন জিয়াউর রহমান
সৈয়দ বোরহান কবীর:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ দৈনিক আমাদের সময়ে একটি কৌতূহলোদ্দীপক রহস্যময় লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম “সংবিধানের কবর রচনা’ করেছিলেন আসলে কে?” মজার ব্যাপার হলো লেখক তার নাম প্রকাশ করেননি। তিনি আমার ২ সেপ্টেম্বরের একটি লেখার সমালোচনা করেছেন।
আমার ‘সংসদীয় কমিটিগুলো কি সীমালঙ্ঘন করেছে’ শিরোনামে লেখার একটি অংশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেখক বলেছেন “ বিশেষত জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে যে সংবিধান আবার চালু করেন তা নাকি ছিল বিকৃত এবং জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্কহীন। সৈয়দ কবীরের বিচারে ‘সংবিধানের কবর রচিত’ হয়ে থাকলে তার মূল নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ। ভাবতে অবাক লাগে কবীর ১৯৭৪-এর সংবিধান সংশোধনীর কথা ভুলে গেলেন কী করে।”
কারো লেখার প্রতিক্রিয়া কিংবা প্রতিবাদ জানাতে নাম প্রকাশ করে জানানোই শোভন। যিনি আমার লেখার সমালোচনা করেছেন, তার হয়তো নৈতিক এবং আদর্শিক সততা নেই, সে কারণেই তিনি তার নাম প্রকাশের সাহসটুকু দেখাতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো ব্যক্তির লেখার জবাব দেয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে গোয়েবলসীয় কায়দায় ’৭৫-এর পর থেকে যে মিথ্যাচার এবং তথ্যবিকৃতির ধারার সূচনা হয়েছিল, এই লেখার প্রতিটি শব্দচয়ন এবং উক্তি তারই ধারাবাহিকতা। এ কারণেই ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে পাঠকদের সত্য জানাতেই আমাকে এই লেখার অবতারণা ঘটাতে হলো।
সংবিধান একটি রাষ্ট্রের পবিত্র দলিল। কিন্তু সংবিধান একটি পরিবর্তনশীল দলিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান পরিবর্তন করা যায়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদেই এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি নিয়মতান্ত্রিক ধারা আছে। ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যনৱ সংবিধানের চারটি সংশোধনী হয়েছে, তা ঐ নিয়ম মেনেই হয়েছে। ’৭৫-এর চতুর্থ সংশোধনী প্রসঙ্গে লেখক কথা বলেছেন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ঐকমত্যের সরকার ‘বাকশাল’ তৈরি করা হয়। পাঠক লক্ষ্য করুন, ’৭২-এ আমাদের সংবিধান চারটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই চার মূলনীতি ছিল- ধর্ম-নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র। বস্তুত ‘বাকশাল’ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করেছিলেন। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়নি। বরং যে সংসদে বিরোধী দলের সদস্য ছিল না বললেই চলে, যেখানে একরম একটি ব্যবস্থার বিকল্প ছিল না। সংসদীয় গণতন্ত্র তখনই তাৎপর্যময় এবং অর্থপূর্ণ হয় যখন সেখানে বিরোধী দলের শক্তিশালী এবং কার্যকর অবস্থান থাকে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৭ জন। কাজেই সকলের মতামতভিত্তিক একটি সরকার ব্যবস্থা চালুর স্বপ্ন থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করেছিলেন। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়েছিল।
বাকশাল সঠিক ছিল কিনা সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু বাকশাল গঠন করা হয়েছিল সংবিধানের আওতার মধ্যেই। সংবিধানকে কবর রচনা করে নয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে সংবিধান সংশোধন হয়েছিল।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে একজন রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সংবিধানের কোন বিধানের আওতায়? জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে ঐ হত্যাকাণ্ডসহ সকল অসাংবিধানিক তৎপরতাকে বৈধতা দিয়েছিলেন কোন সংবিধানের আওতায়? প্রেসিডেন্ট সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন কোন সংবিধানের আওতায়? উর্দি পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন কোন সংবিধানের আওতায়? সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে এবং সমাজতন্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা যে সামরিক ফরমান দিয়েছিলেন তা কোন সংবিধানের আওতায়।
আমি আমার লেখায় এই সত্যটি বলার চেষ্টা করেছি যে, সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় সংবিধান সংশোধন না করে সামরিক ফরমান বলে সংবিধান সংশোধন করে জিয়াউর রহমান কেবল সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষুণ্ন করেননি। সংবিধানের কবর রচনা করেছেন। ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে এগুলোকে বৈধতা দিয়ে সংবিধানকে একটি প্রহসনের দলিলে পরিণত করেছিলেন। তাই সংবিধানের কবর আসলে রচনা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান এদেশে প্রথম দেখিয়েছিলেন বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখল করে রাবার স্ট্যাম্পের পার্লামেন্টে তা বৈধতা দেয়া যায়।
আশা করি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঠকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ দৈনিক আমাদের সময়ে একটি কৌতূহলোদ্দীপক রহস্যময় লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম “সংবিধানের কবর রচনা’ করেছিলেন আসলে কে?” মজার ব্যাপার হলো লেখক তার নাম প্রকাশ করেননি। তিনি আমার ২ সেপ্টেম্বরের একটি লেখার সমালোচনা করেছেন।
আমার ‘সংসদীয় কমিটিগুলো কি সীমালঙ্ঘন করেছে’ শিরোনামে লেখার একটি অংশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেখক বলেছেন “ বিশেষত জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে যে সংবিধান আবার চালু করেন তা নাকি ছিল বিকৃত এবং জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্কহীন। সৈয়দ কবীরের বিচারে ‘সংবিধানের কবর রচিত’ হয়ে থাকলে তার মূল নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ। ভাবতে অবাক লাগে কবীর ১৯৭৪-এর সংবিধান সংশোধনীর কথা ভুলে গেলেন কী করে।”
কারো লেখার প্রতিক্রিয়া কিংবা প্রতিবাদ জানাতে নাম প্রকাশ করে জানানোই শোভন। যিনি আমার লেখার সমালোচনা করেছেন, তার হয়তো নৈতিক এবং আদর্শিক সততা নেই, সে কারণেই তিনি তার নাম প্রকাশের সাহসটুকু দেখাতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো ব্যক্তির লেখার জবাব দেয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে গোয়েবলসীয় কায়দায় ’৭৫-এর পর থেকে যে মিথ্যাচার এবং তথ্যবিকৃতির ধারার সূচনা হয়েছিল, এই লেখার প্রতিটি শব্দচয়ন এবং উক্তি তারই ধারাবাহিকতা। এ কারণেই ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে পাঠকদের সত্য জানাতেই আমাকে এই লেখার অবতারণা ঘটাতে হলো।
সংবিধান একটি রাষ্ট্রের পবিত্র দলিল। কিন্তু সংবিধান একটি পরিবর্তনশীল দলিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান পরিবর্তন করা যায়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদেই এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি নিয়মতান্ত্রিক ধারা আছে। ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যনৱ সংবিধানের চারটি সংশোধনী হয়েছে, তা ঐ নিয়ম মেনেই হয়েছে। ’৭৫-এর চতুর্থ সংশোধনী প্রসঙ্গে লেখক কথা বলেছেন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ঐকমত্যের সরকার ‘বাকশাল’ তৈরি করা হয়। পাঠক লক্ষ্য করুন, ’৭২-এ আমাদের সংবিধান চারটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই চার মূলনীতি ছিল- ধর্ম-নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র। বস্তুত ‘বাকশাল’ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করেছিলেন। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়নি। বরং যে সংসদে বিরোধী দলের সদস্য ছিল না বললেই চলে, যেখানে একরম একটি ব্যবস্থার বিকল্প ছিল না। সংসদীয় গণতন্ত্র তখনই তাৎপর্যময় এবং অর্থপূর্ণ হয় যখন সেখানে বিরোধী দলের শক্তিশালী এবং কার্যকর অবস্থান থাকে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৭ জন। কাজেই সকলের মতামতভিত্তিক একটি সরকার ব্যবস্থা চালুর স্বপ্ন থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করেছিলেন। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়েছিল।
বাকশাল সঠিক ছিল কিনা সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু বাকশাল গঠন করা হয়েছিল সংবিধানের আওতার মধ্যেই। সংবিধানকে কবর রচনা করে নয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে সংবিধান সংশোধন হয়েছিল।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে একজন রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সংবিধানের কোন বিধানের আওতায়? জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে ঐ হত্যাকাণ্ডসহ সকল অসাংবিধানিক তৎপরতাকে বৈধতা দিয়েছিলেন কোন সংবিধানের আওতায়? প্রেসিডেন্ট সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন কোন সংবিধানের আওতায়? উর্দি পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন কোন সংবিধানের আওতায়? সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে এবং সমাজতন্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা যে সামরিক ফরমান দিয়েছিলেন তা কোন সংবিধানের আওতায়।
আমি আমার লেখায় এই সত্যটি বলার চেষ্টা করেছি যে, সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় সংবিধান সংশোধন না করে সামরিক ফরমান বলে সংবিধান সংশোধন করে জিয়াউর রহমান কেবল সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষুণ্ন করেননি। সংবিধানের কবর রচনা করেছেন। ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে এগুলোকে বৈধতা দিয়ে সংবিধানকে একটি প্রহসনের দলিলে পরিণত করেছিলেন। তাই সংবিধানের কবর আসলে রচনা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান এদেশে প্রথম দেখিয়েছিলেন বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখল করে রাবার স্ট্যাম্পের পার্লামেন্টে তা বৈধতা দেয়া যায়।
আশা করি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঠকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত