রায়ের প্রতিফলন দেখতে চাই: মুহিতুল
রায়ের প্রতিফলন দেখতে চাই: মুহিতুল
লিটন হায়দার টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ঢাকা, অক্টোবর ০৫ () -- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আপিল শুনানি সোমবার শুরু হতে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদী মুহিতুল ইসলাম। রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি অনেক খুশি যে, আমার এতো দিনের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ যে রায় হয়েছে, আমি তার প্রতিফলন দেখতে চাই।" বিচার এবং রায় কার্যকর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে তিনি আন্দোলনে নামবেন জানিয়ে বলেন, "বিচার ও রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হলে আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও ভক্তদের নিয়ে রাস্তায় আন্দোলনে নামবো। আশা করি, এটা আর দীর্ঘস্থায়ী হবে না।" তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম তার মিরপুরের বাসা বসে ১৫ আগস্টের মর্মন্তুদ ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, "১৪ আগস্ট রাত ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন শুরু করি। তখনও বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেননি। ফেরার পর প্রতিদিনকার মতো তিনি আমার ঘরে উঁকি দিয়ে হেসে চলে যান।" মুহিতুল ইসলাম বলেন "তখন আমি ব্যাচেলার। বঙ্গবন্ধু বাসায় আসার পর একটি গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হই। রাত ২টার দিকে ফিরে শুয়ে পড়ি। এর কিছুক্ষণ পরে টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে জানান বঙ্গবন্ধু ডাকছেন। "টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সেরনিয়াবাতের (আবদুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় হামলা হয়েছে। বিষয়টি যেনো টেলিফোনে পুলিশকে জানাই। কিন্তু একাধিকবার টেলিফোন করেও কোনো থানায় যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। "এ সময় বৃষ্টির মতো গুলির শব্দ শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর তা থেমে যায়। এর কিছু পরে বঙ্গবন্ধু নিজে লুঙ্গি পরে টেলিফোন ঘরে আসেন। টেলিফোনটি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এরপরে আবারও বৃষ্টির মতো গুলি হতে থাকে। "একটা পর্যায়ে যে কক্ষে আমি আর বঙ্গবন্ধু ছিলাম, সেখানেও অবিরাম গুলি হতে থাকে। এ সময় বঙ্গবন্ধু মেঝেতে শুয়ে পড়েন এবং আমাকে শুতে বলেন। এ সময় জানালার কাচের টুকরা এসে আমার হাতে লাগলে কেটে যায়। "তা দেখে বঙ্গবন্ধু আমাকে টেনে তার পাশে নিয়ে শোয়ান। কিছুক্ষণ পরে গুলি থামে। তখন কাজের ছেলে বঙ্গবন্ধুর চশমা ও পাঞ্জাবি নিয়ে আসে। তিনি আমার সামনেই তা পরেন। পরে বারান্দায় এসে বলেন, এতো গুলি চলছে, আর্মি, সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি তোমরা কি করো? "এই বলে বঙ্গবন্ধু উপরে চলে যান। এরপরেই ঘাতকরা বাসার ভেতর ঢুকে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালায়। "আমার ধারণা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে কেউ হত্যা করতে পারবে না। এটা এখনো আমার বিশ্বাসের বাইরে," বলেন মুহিত। বঙ্গবন্ধু ইচ্ছা করলে তখন বাসা থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে যেতে পারতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বঙ্গবন্ধু সে ধরনের নয় বলেই পালাননি। তবে তিনি সরে গেলে ঘাতকরা হয়তো অন্য কাউকে হত্যা করতো না।" আবেগাপ্লুত মুহিতুল বলেন, "ঘাতকদের অভিযানের শেষ শিকার ছিল শিশু রাসেল। সবাইকে হত্যার পর তাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। এ সময় রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে জানতে চায়- ওরা আমাকে মারবে না তো? "কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ঘাতক আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে মেরে রাসেলকে নিয়ে পুলিশ বক্সে আটকায়। এরপর দুই ঘাতক রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে নিয়ে যায়। এর একটু পরেই গুলির শব্দ।" মামলা দায়েরে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "১৯৭৬ সালের প্রথম দিকে মামলা করতে লালবাগ থানায় গিয়েছিলাম। সে সময় কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা আমার এজাহারটি নিয়ে ওসির কক্ষে যান এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসেই আমার গালে পরপর দুই থাপ্পড় মেরে বলেন, হারামজাদা তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি।" সেদিন মামলা না নিয়ে তাকে মেরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা উপকার করেছিলেন বলে এখন মনে হয় মুহিতুলের। তিনি বলেন, "মামলা হলে ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দিতো না এবং ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতাম বলে মনে হয়। পরে যখন নিরাপদ মনে হয়েছে, তখন মামলা করেছি।" আসামি পক্ষ থেকে হুমকি আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, "হ্যাঁ প্রথম থেকে এখনও হুমকি পাচ্ছি। তবে পরোয়া করি না।" হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মুহিতুল ইসলাম। চার আসামি মারা যাওয়ায় ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ ২০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট প্রথমে বিভক্ত রায় দিলে পরে তৃতীয় বেঞ্চে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে সোমবার সকালে আপিল শুনানি শুরু হচ্ছে। এ জন্য রোববার আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন।
লিটন হায়দার টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ঢাকা, অক্টোবর ০৫ () -- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আপিল শুনানি সোমবার শুরু হতে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদী মুহিতুল ইসলাম। রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি অনেক খুশি যে, আমার এতো দিনের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ যে রায় হয়েছে, আমি তার প্রতিফলন দেখতে চাই।" বিচার এবং রায় কার্যকর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে তিনি আন্দোলনে নামবেন জানিয়ে বলেন, "বিচার ও রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হলে আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও ভক্তদের নিয়ে রাস্তায় আন্দোলনে নামবো। আশা করি, এটা আর দীর্ঘস্থায়ী হবে না।" তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম তার মিরপুরের বাসা বসে ১৫ আগস্টের মর্মন্তুদ ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, "১৪ আগস্ট রাত ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন শুরু করি। তখনও বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেননি। ফেরার পর প্রতিদিনকার মতো তিনি আমার ঘরে উঁকি দিয়ে হেসে চলে যান।" মুহিতুল ইসলাম বলেন "তখন আমি ব্যাচেলার। বঙ্গবন্ধু বাসায় আসার পর একটি গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হই। রাত ২টার দিকে ফিরে শুয়ে পড়ি। এর কিছুক্ষণ পরে টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে জানান বঙ্গবন্ধু ডাকছেন। "টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সেরনিয়াবাতের (আবদুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় হামলা হয়েছে। বিষয়টি যেনো টেলিফোনে পুলিশকে জানাই। কিন্তু একাধিকবার টেলিফোন করেও কোনো থানায় যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। "এ সময় বৃষ্টির মতো গুলির শব্দ শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর তা থেমে যায়। এর কিছু পরে বঙ্গবন্ধু নিজে লুঙ্গি পরে টেলিফোন ঘরে আসেন। টেলিফোনটি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এরপরে আবারও বৃষ্টির মতো গুলি হতে থাকে। "একটা পর্যায়ে যে কক্ষে আমি আর বঙ্গবন্ধু ছিলাম, সেখানেও অবিরাম গুলি হতে থাকে। এ সময় বঙ্গবন্ধু মেঝেতে শুয়ে পড়েন এবং আমাকে শুতে বলেন। এ সময় জানালার কাচের টুকরা এসে আমার হাতে লাগলে কেটে যায়। "তা দেখে বঙ্গবন্ধু আমাকে টেনে তার পাশে নিয়ে শোয়ান। কিছুক্ষণ পরে গুলি থামে। তখন কাজের ছেলে বঙ্গবন্ধুর চশমা ও পাঞ্জাবি নিয়ে আসে। তিনি আমার সামনেই তা পরেন। পরে বারান্দায় এসে বলেন, এতো গুলি চলছে, আর্মি, সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি তোমরা কি করো? "এই বলে বঙ্গবন্ধু উপরে চলে যান। এরপরেই ঘাতকরা বাসার ভেতর ঢুকে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালায়। "আমার ধারণা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে কেউ হত্যা করতে পারবে না। এটা এখনো আমার বিশ্বাসের বাইরে," বলেন মুহিত। বঙ্গবন্ধু ইচ্ছা করলে তখন বাসা থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে যেতে পারতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বঙ্গবন্ধু সে ধরনের নয় বলেই পালাননি। তবে তিনি সরে গেলে ঘাতকরা হয়তো অন্য কাউকে হত্যা করতো না।" আবেগাপ্লুত মুহিতুল বলেন, "ঘাতকদের অভিযানের শেষ শিকার ছিল শিশু রাসেল। সবাইকে হত্যার পর তাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। এ সময় রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে জানতে চায়- ওরা আমাকে মারবে না তো? "কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ঘাতক আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে মেরে রাসেলকে নিয়ে পুলিশ বক্সে আটকায়। এরপর দুই ঘাতক রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে নিয়ে যায়। এর একটু পরেই গুলির শব্দ।" মামলা দায়েরে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "১৯৭৬ সালের প্রথম দিকে মামলা করতে লালবাগ থানায় গিয়েছিলাম। সে সময় কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা আমার এজাহারটি নিয়ে ওসির কক্ষে যান এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসেই আমার গালে পরপর দুই থাপ্পড় মেরে বলেন, হারামজাদা তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি।" সেদিন মামলা না নিয়ে তাকে মেরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা উপকার করেছিলেন বলে এখন মনে হয় মুহিতুলের। তিনি বলেন, "মামলা হলে ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দিতো না এবং ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতাম বলে মনে হয়। পরে যখন নিরাপদ মনে হয়েছে, তখন মামলা করেছি।" আসামি পক্ষ থেকে হুমকি আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, "হ্যাঁ প্রথম থেকে এখনও হুমকি পাচ্ছি। তবে পরোয়া করি না।" হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মুহিতুল ইসলাম। চার আসামি মারা যাওয়ায় ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ ২০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট প্রথমে বিভক্ত রায় দিলে পরে তৃতীয় বেঞ্চে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে সোমবার সকালে আপিল শুনানি শুরু হচ্ছে। এ জন্য রোববার আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন।