মোশতাকের বাড়িতে ও কুমিলস্নার বার্ডে বসে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র হয়
মোশতাকের বাড়িতে ও কুমিল্লার বার্ডে বসে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র হয়
মিলটন আনোয়ার ও হিরা তালুকদার: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিলের শুনানি দুই দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল আবারো অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুনানিতে পেপারবুকের ১১৪০ পৃষ্ঠা থেকে ১২৪০ পৃষ্ঠা পর্যনৱ বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হকের দেয়া রায়ের অংশ পাঠ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুলস্নাহ আল মামুন।
রায়ের ঐ অংশে খায়র"ল হক তার পর্যালোচনায় ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। খায়র"ল হক রায়ে বলেছেন, সাক্ষীদের বক্তব্যে দেখা যায় ১৯৭৫ সালের মার্চে শাহারিয়ার, ফার"কসহ একাধিক সেনা কর্মকর্তা খন্দকার মোশতাকের দাউদকান্দি ও কুমিলস্নার বাড়িতে ও বার্ডে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের রূপরেখা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। ওই রূপরেখার প্রেক্ষিতে ১৪ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টের বালুরঘাটে প্যারেড গ্রাউন্ডে ফার"ক বক্তব্য দেন। পরদিন ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আসামিপক্ষের বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডটি ষড়যন্ত্রমূলক ছিল না। আসামিদের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, যখন একটি মামলা নির্দিষ্ট হত্যামামলায় পরিণত হয়ে যায় তখন কোনো ষড়যন্ত্রের পৃথক অভিযোগ থাকে না। যেহেতু এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়ে গেছে সুতরাং ষড়যন্ত্রের আলাদা কোনো অভিযোগ হবে না।
কারণ হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শাসিৱ মৃত্যুদণ্ড। তাই এ ষড়যন্ত্র মামলা মৌলিক মামলায় পরিণত হয়েছে। বিচারপতি খায়র"ল হক এ অভিযোগ মেনে না নিয়ে তার রায়ে বলেছেন, আসামিরা দোষী, এটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়েছে এবং সমসৱ রায়ের মধ্যে ষড়যন্ত্র মামলা হত্যামামলায় পরিণত হয়ে গেলেও, ষড়যন্ত্রের জন্য আলাদা অভিযোগ হবে। একই ব্যক্তিরা ফৌজদারি আক্রমণের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এদিকে আসামি বজলুল হুদার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফৌজদারি আইন অনুযায়ী প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা আলাদা বিচার করতে হয়। কিন' এই মামলায় দেখা গেছে যে, ভিন্ন ভিন্নভাবে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। কিন' মামলাগুলো বিচার করা হ"েছ একসঙ্গে। এটি ভুল সমন্বয়সূচক অপরাধ। তাই এই মামলা সম্পূর্ণভাবে বাতিলযোগ্য।
কিন' এই অভিযোগ গ্রহণ না করে বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক তার রায়ে বলেন, যদিও আইনে আছে যে একটি মামলার জন্য একটি বিচার হবে। তবে আইনে আরো আছে যদি মামলাগুলোর মধ্যে ধারাবাহিক যোগসূত্র থাকে তাহলে একসঙ্গে বিচার করা যাবে। আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ধারাবহিক যোগসূত্র নেই। এ ঘটনাটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে হয়েছে। পৃথক বিচার করলে ন্যায়সঙ্গত হতো। একসঙ্গে করা হলে আইনত বাতিল হয়ে যায়।
আসামিপক্ষের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে রায় দিয়েছেন বিচারপতি খায়র"ল হক। প্রতিটি আসামির পৃথক মামলা বিবেচনা করার আগে ১৫ আগস্টের আগে এবং পরে বাংলাদেশের তৎকালীন পরিসি'তি সম্পর্কে বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হকের রায়ের পর্যালোচনায় সাক্ষী মেজর শফিউলস্নাহর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশের অবস'া তুলে ধরেন। জবানবন্দিতে শফিউলস্নাহ জানান, ১৯৭২ সালে মেজর জিয়ার এক র্যাঙ্ক নিচে থাকা সত্ত্বেও মেজর শফিউলস্নাহকে সেনাপ্রধান করায় জিয়াউর রহমানের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী গোলাম মোসৱফার বাড়িতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে মেজর ডালিমের সঙ্গে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
রক্ষী বাহিনী প্রসঙ্গে মেজর শফিউলস্নাহ বলেন, রক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়েছে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য। কিন' দেশের জনগণের কাছে অপপ্রচার চালানো হয় যে রক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য। এসব ঘটনায় পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে মেজর ডালিমকে অপসারণ করা হয়। কর্নেল তাহের সেনাপ্রধান শফিউলস্নাহকে পদ ছেড়ে দিয়ে জিয়াকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে তাকেও পদচ্যুত করা হয়। সেনাবাহিনীর আরেক সদস্য জিয়াউদ্দিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারের বির"দ্ধে একটি প্রতিবেদন লিখলে তা বাতিলের জন্য মেজর শফিউলস্নাহ তাকে অনুরোধ করলেও তিনি তা শোনেননি। সেনাপ্রধান শফিউলস্নাহ মনে করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যদি অনুরোধ করেন তাহলে হয়তো ওই সেনা সদস্য প্রতিবেদনের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেবেন। কিন' জিয়াউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর কথাও শোনেননি। ফলে তাকেও অপসারণ করা হয়।
এভাবে মেজর নূরসহ অনেককেই তৎকালীন সময়ে পদচ্যুত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান শফিউলস্নাহ বঙ্গবন্ধুকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাছ থেকে নিয়ে রক্ষী বাহিনীর কাছে দেয়ার অনুরোধ করেন। এসব কারণে তৎকালীন বাংলাদেশের অবস'া বিশৃঙ্খলপূর্ণ ছিল।
সম্পাদনা: হাসিবুল ফার"ক চৌধুরী
রায়ের ঐ অংশে খায়র"ল হক তার পর্যালোচনায় ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। খায়র"ল হক রায়ে বলেছেন, সাক্ষীদের বক্তব্যে দেখা যায় ১৯৭৫ সালের মার্চে শাহারিয়ার, ফার"কসহ একাধিক সেনা কর্মকর্তা খন্দকার মোশতাকের দাউদকান্দি ও কুমিলস্নার বাড়িতে ও বার্ডে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের রূপরেখা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। ওই রূপরেখার প্রেক্ষিতে ১৪ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টের বালুরঘাটে প্যারেড গ্রাউন্ডে ফার"ক বক্তব্য দেন। পরদিন ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আসামিপক্ষের বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডটি ষড়যন্ত্রমূলক ছিল না। আসামিদের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, যখন একটি মামলা নির্দিষ্ট হত্যামামলায় পরিণত হয়ে যায় তখন কোনো ষড়যন্ত্রের পৃথক অভিযোগ থাকে না। যেহেতু এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়ে গেছে সুতরাং ষড়যন্ত্রের আলাদা কোনো অভিযোগ হবে না।
কারণ হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শাসিৱ মৃত্যুদণ্ড। তাই এ ষড়যন্ত্র মামলা মৌলিক মামলায় পরিণত হয়েছে। বিচারপতি খায়র"ল হক এ অভিযোগ মেনে না নিয়ে তার রায়ে বলেছেন, আসামিরা দোষী, এটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়েছে এবং সমসৱ রায়ের মধ্যে ষড়যন্ত্র মামলা হত্যামামলায় পরিণত হয়ে গেলেও, ষড়যন্ত্রের জন্য আলাদা অভিযোগ হবে। একই ব্যক্তিরা ফৌজদারি আক্রমণের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এদিকে আসামি বজলুল হুদার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফৌজদারি আইন অনুযায়ী প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা আলাদা বিচার করতে হয়। কিন' এই মামলায় দেখা গেছে যে, ভিন্ন ভিন্নভাবে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। কিন' মামলাগুলো বিচার করা হ"েছ একসঙ্গে। এটি ভুল সমন্বয়সূচক অপরাধ। তাই এই মামলা সম্পূর্ণভাবে বাতিলযোগ্য।
কিন' এই অভিযোগ গ্রহণ না করে বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক তার রায়ে বলেন, যদিও আইনে আছে যে একটি মামলার জন্য একটি বিচার হবে। তবে আইনে আরো আছে যদি মামলাগুলোর মধ্যে ধারাবাহিক যোগসূত্র থাকে তাহলে একসঙ্গে বিচার করা যাবে। আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ধারাবহিক যোগসূত্র নেই। এ ঘটনাটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে হয়েছে। পৃথক বিচার করলে ন্যায়সঙ্গত হতো। একসঙ্গে করা হলে আইনত বাতিল হয়ে যায়।
আসামিপক্ষের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে রায় দিয়েছেন বিচারপতি খায়র"ল হক। প্রতিটি আসামির পৃথক মামলা বিবেচনা করার আগে ১৫ আগস্টের আগে এবং পরে বাংলাদেশের তৎকালীন পরিসি'তি সম্পর্কে বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হকের রায়ের পর্যালোচনায় সাক্ষী মেজর শফিউলস্নাহর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশের অবস'া তুলে ধরেন। জবানবন্দিতে শফিউলস্নাহ জানান, ১৯৭২ সালে মেজর জিয়ার এক র্যাঙ্ক নিচে থাকা সত্ত্বেও মেজর শফিউলস্নাহকে সেনাপ্রধান করায় জিয়াউর রহমানের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী গোলাম মোসৱফার বাড়িতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে মেজর ডালিমের সঙ্গে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
রক্ষী বাহিনী প্রসঙ্গে মেজর শফিউলস্নাহ বলেন, রক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়েছে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য। কিন' দেশের জনগণের কাছে অপপ্রচার চালানো হয় যে রক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য। এসব ঘটনায় পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে মেজর ডালিমকে অপসারণ করা হয়। কর্নেল তাহের সেনাপ্রধান শফিউলস্নাহকে পদ ছেড়ে দিয়ে জিয়াকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে তাকেও পদচ্যুত করা হয়। সেনাবাহিনীর আরেক সদস্য জিয়াউদ্দিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারের বির"দ্ধে একটি প্রতিবেদন লিখলে তা বাতিলের জন্য মেজর শফিউলস্নাহ তাকে অনুরোধ করলেও তিনি তা শোনেননি। সেনাপ্রধান শফিউলস্নাহ মনে করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যদি অনুরোধ করেন তাহলে হয়তো ওই সেনা সদস্য প্রতিবেদনের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেবেন। কিন' জিয়াউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর কথাও শোনেননি। ফলে তাকেও অপসারণ করা হয়।
এভাবে মেজর নূরসহ অনেককেই তৎকালীন সময়ে পদচ্যুত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান শফিউলস্নাহ বঙ্গবন্ধুকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাছ থেকে নিয়ে রক্ষী বাহিনীর কাছে দেয়ার অনুরোধ করেন। এসব কারণে তৎকালীন বাংলাদেশের অবস'া বিশৃঙ্খলপূর্ণ ছিল।
সম্পাদনা: হাসিবুল ফার"ক চৌধুরী