বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ



বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ





আজ ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানী সামরিক জান্তার আক্রোশের শিকার হয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ ১০ মাস কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হানাদার পাকিসৱানী বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালি নিধনের নীলনকশা বাসৱবায়নের জন্য ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরম্ন করে। ঐ রাতেই বর্বর পাকবাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়, শুরু করে গণহত্যা। খড়গ নেমে আসে বঙ্গবন্ধুর ওপর। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন। পাকিস্তানীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসা থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। পরে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। এই সরকারের নেতৃত্বেই চলে মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশে যখন যুদ্ধ চলছে ঠিক তখন পাকিসৱানে বঙ্গবন্ধুর বিরম্নদ্ধে পাতানো বিচার শুরম্ন হয়। তার ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। কারাগারের যে সেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবরও খোঁড়া হয়। কিন' বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা প্রবল জনমতের চাপে পাকিসৱান সরকার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে সাহস পায়নি।
দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে। আনৱর্জাতিক চাপের মুখে পাকিসৱান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু ।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পৰ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান এক বাণীতে বলেছেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অনন্যসাধারণ নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স'পতি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান পাকিসৱানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ঐতিহাসিক ১০ই জানুয়ারি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। তাঁকে ফিরে পেয়ে বাংলাদেশের সর্বসৱরের জনগণ আনন্দ, উ"ছ্বাস ও আবেগে আপস্নুত হয়ে পড়ে। জীবনমৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ংকর অধ্যায় পার হয়ে সারাজীবনের স্বপ্ন, সাধনা ও নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান নেতার প্রত্যাবর্তন, সকল সৱরের জনগণকেই সীমাহীন আনন্দে উদ্বেলিত করে। ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে ততকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আবেগআপস্নুত কণ্ঠে বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা যতদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকবো, ততদিন আমাদের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব অটুট থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ সাড়ে নয় মাস পাকিসৱানের কারাগারে বন্দীজীবন শেষে এদিন জাতির জনক প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়। তাঁর নেতৃত্বে জাতি নতুন প্রত্যয় নিয়ে শুরম্ন করে যুদ্ধবিধ্বসৱ দেশ গড়ার সংগ্রাম। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে সপরিবারে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বন্দুকের জোরে ৰমতা দখলকারীরা হত্যা করে গণতন্ত্র, রম্নদ্ধ করে প্রগতি ও উন্নয়নের ধারা। আইন করে বন্ধ করে দেয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ। সকল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে আজ আবারও শুরম্ন হয়েছে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যা"েছ দিনবদলের স্বপ্নকে সামনে নিয়ে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলৰে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৭টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৭টায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আনৱর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংগঠনের সকল শাখাকে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের আহবান জানিয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। নেতৃবৃন্দের মধ্যে থাকবেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স'ানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারম্নক খান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী এবং নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি প্রমুখ। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপেস্নক্সের পাবলিক পস্নাজায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনাসভায় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। বাদ জোহর সমাধিসৌধ কমপেক্স মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
যুবলীগ
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে যুবলীগ গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এক বিবৃতিতে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ওমর ফারম্নক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম সকল নেতা-কর্মীকে গৃহীত কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহবান

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা