বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহবান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান

বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহবান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান

ঢাকা, জানুয়ারি ০৪ বিরোধী দলকে নতুন বছরে সংসদে আসার আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। নতুন বছরে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের ভাষণে জিল্লুর রহমান প্রধান বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে বলেন, "আমি আশা করি, বিরোধী দল সংসদে যোগদান করে জনগণ কর্তৃক ন্যস্ত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অবদান রাখবে।" রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জিল্লুর রহমান এবারই প্রথম সংসদে বক্তব্য দিলেন। এর আগে ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। বিরোধীদলকে জাতীয় উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে রাষ্টপতি বলেন, "বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার গতানুগতিক ধারা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র জাতীয় সংসদ।" জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারি ও বিরোধীদলের সাংসদরা জাতির কাছে দায়বদ্ধ। এজন্য সব পক্ষই নিয়মিত সংসদে অংশগ্রহণ করে একে কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা। হিংসা-বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত এবং সংকীর্ণ স্বার্থের ওপরে উঠে সাংসদদের গঠনমূলক, কার্যকর ও সক্রিয় হওয়ার আহবান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি আরো বলেন, "বর্তমান সরকার ঘোষিত দিনবদলের সনদের আলোকে সর্বস্তরে এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।" নতুন প্রজন্মকে তাদের শ্রম, মেধা ও জ্ঞান পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর আহবান জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, "ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা গড়ে দিয়ে যাব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা- এ হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার।" রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতার শুরুতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের ঘটনায় নিহত বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতাসহ অন্যরা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত, চারদলীয় জোট সরকারের সময় নিহত আওয়ামী লীগের সাংসদ এবং বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণ করেন। তিনি আরো স্মরণ করেন উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় নেতাদের। রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতা শেষ করেন, 'জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু' বলে। ২৩ মিনিটের এ বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক দিকগুলো উঠে এসেছে। জিল্লুর রহমানের নাম ঘোষণা হওয়ার পর উপস্থিত সাংসদরা টেবিল চাপড়ে তাকে অভিনন্দন জানান। ভাষণে রাষ্ট্রপতি সরকারের সাফল্যের বর্ণনা করে বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাস করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব মন্দা মোকাবেলায় সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে প্রণোদনার জন্য বাজেটে ৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দের উল্লেখ করেন তিনি। জিল্লুর রহমান মন্তব্য করেন, "এই সরকার দেশকে দুর্নীতির কলঙ্ক থেকে মুক্ত করেছে।" ২০১০ শিক্ষা বর্ষে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি, এবতেদায়ী ও দাখিল স্তরের জন্য প্রায় ১৯ কোটি বই বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। 'স্বার্থান্বেষী মহল' এ উদ্যোগ বিনাশের জন্য টেক্সট বুক বোর্ডের গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটায় অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ সত্ত্বেও দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করা হয়েছে। যোগাযোগ এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশংসা করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল (সংশোধন) অ্যাক্ট ২০০৯ পাশ করা এবং ট্রাইবুনালের জন্য প্রাথমিক স্থান নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "আশা করা যায়, আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন হবার পর পরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করা হবে।" রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থী দমন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ কোনো ধরণের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না। বাংলাদেশে যাতে কোনরকম জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংগঠিত হতে না পারে এবং বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্যদেশে যাতে কোনরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য সরকার ইতিমধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে স্পিকার আব্দুল হামিদ তার বক্তব্যে বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহবান জানান।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা