মক্কায় প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার রাতে মক্কায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন
মক্কায় প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীবন্ধ ও রুগ্ন শিল্প সচল করতে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিনিয়োগে আগ্রহী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার রাতে মক্কায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন
মক্কা (সৌদি আরব) থেকে,প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২০২১ সাল নাগাদ দেশকে আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিণত করার বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বন্ধ ও রুগ্ন শিল্প সচল ও চাঙ্গা করতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।তারা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ১৫ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশীর সঞ্চয় বিনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বন্ধ ও রুগ্ন শিল্প পুনরায় চালু ও চাঙ্গা করতে সম্প্রতি এই অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করেনগতকাল বৃহস্পতিবার এখানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেটালে মক্কা অঞ্চলের প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক বিশাল সংবর্ধনায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের কষ্টার্জিত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।বাংলাদেশ সময় গত রাত আড়াইটায় এই অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং তা ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়। অনুষ্ঠানে প্রবাসীরা সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন এবং বৈদেশিক মুদ্রার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রবাসী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন,আপনারা এই ব্যাংকের মালিক হবেন এবং আগ্রহী লোকজন এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর তাদের উপার্জন থেকে ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করবেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য বাড়ি-ঘর জমি-জমার মতো সম্পদ বিক্রি করার আর প্রয়োজন পড়বে না। আপনাদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।'প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রবাসী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় আবাসন প্রকল্প শুরু করায় তাঁর সরকারের আরেকটি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। তিনি প্রবাসীদের প্রতি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করারও অনুরোধ জানান।প্রবাসীরা তাদেরকে জাতীয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিপুল করতালির মধ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল আপনাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং বিদেশ থেকে যাতে সরাসরি ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেবো। তিনি বলেন, পাসপোর্টের সকল প্রকার অনিয়ম দূর করতে সরকার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)' প্রবর্তন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আগ্রহী শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশ দেবেন। যাতে করে তারা যে দেশে যেতে চান সেদেশের আইন-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করা হবে বলে প্রবাসীদের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আপনারা দূতাবাস কর্মকর্তাদের যে কোন প্রকার অবহেলার অভিযোগ লিখিতভাবে জানাবেন। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, দায়ি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।'শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী ও সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে দূতাবাসাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন প্রদান করা হয়। কাজেই দূতাবাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, ধৈর্য ধরুন, সরকারের পররাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীরা এখানে আমার সঙ্গে রয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূতাবাস ও কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা সরকার ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। কেননা, জনগণ ও সরকারের স্বার্থ দেখার জন্য তাদেরকে বিদেশে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি আটক থাকাকালে তাঁর মুক্তির জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ'র দরবারে প্রার্থনা করায় প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দলের বিশাল বিজয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট প্রদানের জন্য নিকটজনের কাছে বার্তা প্রেরণ করায় প্রবাসীদের অবদান স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জনগণ ব্যাপক আশা নিয়ে আমাদের পক্ষে নির্বাচনে রায় দেয়ায় আমাদের কাঁধে অনেক দায়িত্ব চেপেছে। শেখ হাসিনা ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ডের কথাও উল্লেখ করে বলেন, বিডিআর সদর দফতরে এই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তাঁর সৌদি সফর বিলম্বিত হয়েছে। নতুন করে রক্তপাত ছাড়া তাঁর সরকার বিদ্রোহ দমন করতে পারায় তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।সৌদি বাদশা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণির সঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সংগে সৌদি সরকারের শ্রম উপমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকের ফলাফল বর্ণনাকালে তিনি বলেন, আকামা হস্তান্তরের বিষয়টি শিগগিরই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,এখন আপনারা আপনাদের কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারেন না,পক্ষান্তরে নিয়োগকর্তা আপনাদের চাকরিচ্যুত করলে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। ইনশাআল্লাহ, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।' তিনি বলেন, হজের সময় বাংলাদেশী হজযাত্রীদের আবাসন সমস্যার ব্যাপারে তিনি সৌদি বাদশার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি সৌদি বাদশাকে বলেছি যে, বাংলাদেশী হজযাত্রীদের আবাসনে একটি ডরমিটরি' নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের একখন্ড জমির প্রয়োজন। সৌদি বাদশা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেন।প্রধানমন্ত্রী মক্কায় বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ করে দিতে এ ধরনের চমৎকার অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রবাসীদের সহায়তা করার জন্য মক্কার গভর্নরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। তিনি সৌদি বাদশাহর আরব শান্তি পরিকল্পনার প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বাদশাহর শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম হলেও ইসলামের ভাবমূর্তি কিছু লোকের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ক্ষণ্ণ হচ্ছে, যারা তাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসলামের নাম ব্যবহার করছে।প্রধানমন্ত্রী চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করেন এবং প্রবাসীদের আশ্বাস দেন যে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাংলাদেশে তাদের পরিবারগুলো শান্তিতে বসবাস করবে। তিনি বলেন, চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি এমন দামে চাল ক্রয় করবে যাতে তারা চালের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।অন্যান্যের মধ্যে সাইফুর রহমান, জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও শহীদ হোসেন পাটোয়ারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল হক, মক্কায় নিযুক্ত কনস্যুলার জেনারেল গোলাম সরওয়ার এবং সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে যোগ দেন।মদিনা পৌঁছছেনমদিনা (সৌদি আরব) থেকে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মক্কা থেকে মদিনা এসে পৌঁছেছেন। একটি বিশেষ রাজকীয় বিমানে মক্কা থেকে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমান বন্দরে এসে পৌঁছলে মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন মাজেদ তাঁকে স্বাগত জানান।প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মসজিদে নববীতে বিশেষ নামায আদায় ও মহানবী হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর রওজা মোবারক জেয়ারত করবেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মদিনায় অবস্থান করবেন বলে কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার রাতে মক্কায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন
মক্কা (সৌদি আরব) থেকে,প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২০২১ সাল নাগাদ দেশকে আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিণত করার বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বন্ধ ও রুগ্ন শিল্প সচল ও চাঙ্গা করতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।তারা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ১৫ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশীর সঞ্চয় বিনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বন্ধ ও রুগ্ন শিল্প পুনরায় চালু ও চাঙ্গা করতে সম্প্রতি এই অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করেনগতকাল বৃহস্পতিবার এখানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেটালে মক্কা অঞ্চলের প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক বিশাল সংবর্ধনায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের কষ্টার্জিত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।বাংলাদেশ সময় গত রাত আড়াইটায় এই অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং তা ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়। অনুষ্ঠানে প্রবাসীরা সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন এবং বৈদেশিক মুদ্রার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রবাসী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন,আপনারা এই ব্যাংকের মালিক হবেন এবং আগ্রহী লোকজন এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর তাদের উপার্জন থেকে ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করবেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য বাড়ি-ঘর জমি-জমার মতো সম্পদ বিক্রি করার আর প্রয়োজন পড়বে না। আপনাদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।'প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রবাসী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় আবাসন প্রকল্প শুরু করায় তাঁর সরকারের আরেকটি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। তিনি প্রবাসীদের প্রতি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করারও অনুরোধ জানান।প্রবাসীরা তাদেরকে জাতীয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিপুল করতালির মধ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল আপনাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং বিদেশ থেকে যাতে সরাসরি ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেবো। তিনি বলেন, পাসপোর্টের সকল প্রকার অনিয়ম দূর করতে সরকার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)' প্রবর্তন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আগ্রহী শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশ দেবেন। যাতে করে তারা যে দেশে যেতে চান সেদেশের আইন-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করা হবে বলে প্রবাসীদের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আপনারা দূতাবাস কর্মকর্তাদের যে কোন প্রকার অবহেলার অভিযোগ লিখিতভাবে জানাবেন। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, দায়ি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।'শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী ও সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে দূতাবাসাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন প্রদান করা হয়। কাজেই দূতাবাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, ধৈর্য ধরুন, সরকারের পররাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীরা এখানে আমার সঙ্গে রয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূতাবাস ও কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা সরকার ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। কেননা, জনগণ ও সরকারের স্বার্থ দেখার জন্য তাদেরকে বিদেশে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি আটক থাকাকালে তাঁর মুক্তির জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ'র দরবারে প্রার্থনা করায় প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দলের বিশাল বিজয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট প্রদানের জন্য নিকটজনের কাছে বার্তা প্রেরণ করায় প্রবাসীদের অবদান স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জনগণ ব্যাপক আশা নিয়ে আমাদের পক্ষে নির্বাচনে রায় দেয়ায় আমাদের কাঁধে অনেক দায়িত্ব চেপেছে। শেখ হাসিনা ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ডের কথাও উল্লেখ করে বলেন, বিডিআর সদর দফতরে এই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তাঁর সৌদি সফর বিলম্বিত হয়েছে। নতুন করে রক্তপাত ছাড়া তাঁর সরকার বিদ্রোহ দমন করতে পারায় তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।সৌদি বাদশা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণির সঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সংগে সৌদি সরকারের শ্রম উপমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকের ফলাফল বর্ণনাকালে তিনি বলেন, আকামা হস্তান্তরের বিষয়টি শিগগিরই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,এখন আপনারা আপনাদের কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারেন না,পক্ষান্তরে নিয়োগকর্তা আপনাদের চাকরিচ্যুত করলে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। ইনশাআল্লাহ, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।' তিনি বলেন, হজের সময় বাংলাদেশী হজযাত্রীদের আবাসন সমস্যার ব্যাপারে তিনি সৌদি বাদশার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি সৌদি বাদশাকে বলেছি যে, বাংলাদেশী হজযাত্রীদের আবাসনে একটি ডরমিটরি' নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের একখন্ড জমির প্রয়োজন। সৌদি বাদশা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেন।প্রধানমন্ত্রী মক্কায় বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ করে দিতে এ ধরনের চমৎকার অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রবাসীদের সহায়তা করার জন্য মক্কার গভর্নরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। তিনি সৌদি বাদশাহর আরব শান্তি পরিকল্পনার প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বাদশাহর শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম হলেও ইসলামের ভাবমূর্তি কিছু লোকের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ক্ষণ্ণ হচ্ছে, যারা তাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসলামের নাম ব্যবহার করছে।প্রধানমন্ত্রী চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করেন এবং প্রবাসীদের আশ্বাস দেন যে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাংলাদেশে তাদের পরিবারগুলো শান্তিতে বসবাস করবে। তিনি বলেন, চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি এমন দামে চাল ক্রয় করবে যাতে তারা চালের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।অন্যান্যের মধ্যে সাইফুর রহমান, জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও শহীদ হোসেন পাটোয়ারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল হক, মক্কায় নিযুক্ত কনস্যুলার জেনারেল গোলাম সরওয়ার এবং সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে যোগ দেন।মদিনা পৌঁছছেনমদিনা (সৌদি আরব) থেকে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মক্কা থেকে মদিনা এসে পৌঁছেছেন। একটি বিশেষ রাজকীয় বিমানে মক্কা থেকে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমান বন্দরে এসে পৌঁছলে মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন মাজেদ তাঁকে স্বাগত জানান।প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মসজিদে নববীতে বিশেষ নামায আদায় ও মহানবী হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর রওজা মোবারক জেয়ারত করবেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মদিনায় অবস্থান করবেন বলে কথা রয়েছে।