বিজয়ের ৪০ বছর


বিজয়ের ৪০ বছর" বিজয়ের ৪০ বছর
ঢাকা, ডিসেম্বর ১৬ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে দুই যুগের পাকিস্তানী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এ দিনটি উদযাপনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সকালে শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে (পুরনো বিমানবন্দর) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূর্যোদয়ের সঙ্গেসঙ্গে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রং-বেরংয়ের বিভিন্ন পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশুপরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সংবর্ধনা দেবেন। বাণী রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “এ বছর বিজয়ের চল্লিশ বছর পূর্তি উদযাপিত হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এবারের বিজয় দিবস উদ্যাপন তাৎপর্যপূর্ণ। ভৌগোলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য।” প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতির দীর্ঘ তেইশ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত ফসল ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।” “বর্তমান সরকার সংবিধানে পনেরতম সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে প্রতিহত করতে এ উদ্যোগ এক মাইলফলক।” সেই দিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও যুদ্ধে সক্রিয় সহায়তাকারী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুলাহ খান নিয়াজী। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় পেয়ে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। ’৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর আগেই ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তার ঐতিহাসিক ভাষণে ‘যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত’ থাকার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। নানা কর্মসূচি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রীর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক দেবেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরাও। এছাড়া সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন। রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সালাম গ্রহণ করে থাকেন। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি এবার কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। কুচকাওয়াজে থাকবে বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্ট, উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে রজ্জু বেয়ে অবতরণ, প্যারাস্যুট জাম্প ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা, পোস্টার প্রদর্শনী ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day