বাঙালির বিজয়ের ৪০ বছর পূর্ণ হলো : আজ উৎসব, আজ আনন্দ



বাঙালির বিজয়ের ৪০ বছর পূর্ণ হলো : আজ উৎসব, আজ আনন্দ






মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৪০ বছর পূর্ণ হলো আজ ১৬ ডিসেম্বর,



শুক্রবার। আজ মহান বিজয় দিবস। আজকের প্রভাতে পূর্ব দিগনেৱ যে নতুন সূর্যের উদয় হলো তার রঙ এতো লাল কেন? সেকি ‘হরিদাসী’র সিঁথির সিঁদুর মেখে, নাকি বীর মুক্তিসেনার রক্তের সাগরে স্নাত হয়ে এসেছে বলে? বিজয় আনন্দের, বিজয় গৌরবের, বিজয় মাথা তুলে দাঁড়াবার। কিন্তু বাঙালির বিজয় একাধারে বেদনারও। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত যে বিজয়- সে তো বেদনার অশ্রম্নতে সিক্ত হবেই। তবু শত বেদনার মধ্যেও, বিজয় মানেই যে উৎসব! আজ তাই বাঙালির বিজয় উৎসব। ঘরে ঘরে আজ উড়ছে বিজয় কেতন। হৃদয়ে হৃদয়ে স্ফুরিত আনন্দ প্রভা। এই বাংলাদেশ আমাদের, এই স্বাধীনতা আমাদের। এই বিজয় আমাদের।মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির গৌরবময় বিজয়ের ৪০তম বার্ষিকী আজ। এ জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে গৌরবের মহিমায় সমুন্নত অনন্য এই দিনটি। এমন একটি দিনের প্রতীক্ষায় এ দেশের মানুষ প্রহরের পর প্রহর গুনেছে, লড়াই করেছে জীবন বাজি রেখে, ঝরিয়েছে বুকের তাজা রক্ত। অবশেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে অর্জন করে চূড়ানৱ বিজয়। পূর্ণ হয় মুক্তিপাগল বাঙালির স্বপ্নসাধ। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেশের সর্বত্র আজ আনন্দ-উৎসব, শোক ও শ্রদ্ধার এক অপূর্ব সম্মিলনে পালিত হবে জাতীয় জীবনের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই দিন- বিজয়ের ৪০তম বার্ষিকী।বাঙালির জাতীয় জীবনে এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, ভিন্ন মাত্রায়। এবার যখন আমরা বিজয় উৎসব উদযাপন করতে যাচ্ছি তখন দেশ চালাচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধেরই চেতনায় ঋদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিন বছর বয়সী এ সরকার এরই মধ্যে শুরম্ন করেছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার। চিহ্নিত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবিতে গোটা জাতি আজ একাট্টা। এবারের বিজয় দিবসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করবে জাতি। শপথ নেবে একাত্তরের পরাজিত শত্রম্নদের নির্মূল করার।এদিকে, উচ্চ আদালতের রায়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৭২-এর সংবিধান। ফিরে এসেছে সংবিধানের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র,বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলাদেশ আবার ফিরে এসেছে সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ধারায়। রম্নদ্ধ হয়েছে ধর্মের জিগির তুলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পথ। এই অর্জন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে নিঃসন্দেহে এক ধাপ অগ্রগতি।বাঙালি বরাবরই স্বাধীনচেতা জাতি। বীরত্বপূর্ণ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস এ জাতির গৌরবময় ঐতিহ্যেরই অংশ। তবুও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বাঙালির জন্মভূমি হয়েছে বহিরাগত শাসক-শোষকদের করতলগত। হানাদার বিদেশী শাসকরা বারবার আক্রমণ ও দখল করেছে এ দেশের শাসনদ-, লুণ্ঠন করেছে সম্পদ, শোষণ-নিষ্পেষণে করেছে জর্জরিত। কিন্তু কোনোভাবেই পারেনি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে কেড়ে নিতে। তাই সুযোগ পেলেই এ দেশের মানুষ করেছে বিদ্রোহ। শত্রম্নর বিশাল শক্তিমত্তা জেনেও অসীম সাহসে নেমেছে অসম লড়াইয়ে। বাঙালির এই লড়াই-সংগ্রামেরই চূড়ানৱ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালে।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির মধ্য দিয়ে পূর্ববাংলা পাকিসৱান রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু পাকিসৱানের জন্মলগ্নেই শাসকগোষ্ঠী বাঙালির অসিৱত্বের ওপর আঘাত হানে। ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জনসভা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিসৱানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিসৱানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ছাত্ররা উভয় স্থানেই তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। ছাত্র সমাজের এ প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় আমাদের মাতৃভাষা ‘বাংলা’র মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা দিবস উপলক্ষে আহূত ধর্মঘটে পিকেটিং করার সময় পূর্ব বাংলার সচিবালয় ইডেন বিল্ডিংয়ের গেইট থেকে পুলিশ শেখ মুজিবসহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে নিক্ষেপ করে। দিনে দিনে ছাত্র সমাজের ভাষার অধিকারের এ আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি আন্দোলনের এক পর্যায়ে কারাগারে আটক শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের হলে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ অনেকেই হতাহত হন। ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের’ অনমনীয় এ আন্দোলনের ফলে পাকিসৱানের অবাঙালি শাসকগোষ্ঠী বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন নিছক একটি ভাষা আন্দোলনই ছিল না। এ আন্দোলন ছিল বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি তথা জাতীয় অসিৱত্ব রক্ষার একটি সংগ্রামের সূচনা। এ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আসে ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা সংকোচন নীতি ও আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং চূড়ানৱ পর্যায়ে ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম।পাকিসৱানের রাষ্ট্র কাঠামোয় বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ সম্ভব নয় বিবেচনা করে মূলত ১৯৬২ সালেই তৎকালীন ছাত্রনেতাদের মধ্যে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার চিনৱার উন্মেষ ঘটে। বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ এ ছাত্রনেতারা গোপনে ছাত্রদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতির লক্ষ্যে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ ‘স্বাধীন বাংলা বিপস্নবী পরিষদ’ গঠন করেন সংক্ষেপে যাকে ‘নিউক্লিয়াস’ বলা হতো। ’৬৬ সালের ৫ ফেব্রম্নয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় জাতীয় সংহতি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবি সংবলিত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ৬ দফাই ছিল মূলত বাঙালির মুক্তি সনদ। পরবর্তী সময়ে ৬ দফাকে ধারণ করে ছাত্ররা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে। ৬ দফা ও ১১ দফা বাঙালির প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়। এ সময় পাকিসৱান সরকার মিথ্যা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’য় বঙ্গবন্ধুকে অভিযুক্ত ও বন্দী করে। এতে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এক পর্যায়ে এ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে ’৬৯-এর ২৫ মার্চ আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হসৱানৱর করেন। ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার গণদাবিকে উপেক্ষা করতে পারেনি- সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ’৭০-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হসৱানৱরের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও পাকিসৱানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হসৱানৱরে টালবাহানা শুরম্ন করে। শুরম্ন হয় ষড়যন্ত্র। ’৭১ সালের ১ মার্চ এক বেতার ঘোষণায় ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ আহূত পার্লামেন্ট অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্নিগর্ভ ভাষণ, তার বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- জাতির চূড়ানৱ লড়াই-সংগ্রামের পথ দেখায়। শুরম্ন হয় অসহযোগ আন্দোলন। শুরম্ন হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও।এদিকে সংকট নিরসনে আলোচনার নামে কালক্ষেপণ শুরম্ন করে পাকিসৱানি সামরিক জানৱা। এই কালক্ষেপণের সুযোগে পাকিসৱানি শাসকগোষ্ঠী এ দেশে নিয়ে আসে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও অস্ত্র। তারপর ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিসৱানি বাহিনী ঘুমনৱ বাঙালির ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের ধারণা ছিল অতর্কিত আক্রমণে বাঙালি হতচকিত হয়ে পড়বে, হত্যা নির্যাতনের ভয়ে স্বাধীনতার দাবি পরিত্যাগ করবে। কিন্তু তারা জানতো না বাঙালির আপোসহীন বীরত্বের ইতিহাস। তারা অনুভব করতে পারেনি বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা কতোটা তীব্র, অদম্য। পাকিসৱানি শাসকগোষ্ঠীকে হতবাক করে দিয়ে সেই কালরাতেই রম্নখে দাঁড়ায় স্বাধীনতাকামী বাঙালি। শুরম্ন হয় প্রতিরোধ সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ।একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর, ৯ মাস পাকিসৱানি হানাদার বাহিনী এ দেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার কোনো পরিমাপ হয় না। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে মাটি। সম্ভ্রম হারিয়েছেন, চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ লাখ মা-বোন। জাতি এ যুদ্ধে হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সনৱান বুদ্ধিজীবীদের। পাকিসৱানি বাহিনীর গণহত্যার প্রত্যুত্তরে একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বিজয় অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে অকুতোভয় বাঙালি জাতি যে যুদ্ধ শুরম্ন করেছিল তার সমাপ্তি হয় আনন্দ-বেদনার সম্মিলনে ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর।২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিসৱানি সেনাবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালায় ঢাকাসহ দেশের সবগুলো বড় শহর ও সেনানিবাসে বাঙালি রেজিমেন্টগুলোর ওপর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাত ১২টার পর তার ধানম-ির বাসভবনে পাকিসৱানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন। বন্দী হওয়ার পূর্বে তিনি দলীয় নেতৃবৃন্দকে করণীয় বিষয়ে যথাযথ নির্দেশনা দিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা অয়্যারলেস মেসেজের মাধ্যমে সারা দেশে পৌঁছে যায়। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা লিফলেট আকারে বিলিও করা হয়। পরে ২৭ মার্চ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার প্রচার করা হয়।ইতোমধ্যে শুরম্ন হয়ে যায় প্রতিরোধ সংগ্রাম। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনতার সহযোগিতায় মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত হন। কিন্তু শক্তিশালী হানাদার পাকিসৱানি সৈন্যদের বিরম্নদ্ধে বেশিদিন টিকতে না পেরে প্রতিরোধ যোদ্ধারা সীমানৱ অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। বঙ্গবন্ধুর পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৭১’র ১০ এপ্রিল নির্বাচিত সাংসদরা ভারতের আগরতলায় একত্রিত হয়ে এক সর্বসম্মত সিদ্ধানেৱ সরকার গঠন করেন। এ সরকার স্বাধীন সার্বভৌম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’। স্বাধীনতার সনদ বলে এ সরকারের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়। ১৭ এপ্রিল এই প্রবাসী সরকার মেহেরপুরের ভবেরপাড়ায় (বৈদ্যনাথতলা) আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করে। বাঙালির প্রাণপুরম্নষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে শপথ গ্রহণের এ স্থানটির নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগরে শপথ নেয় বলে এ সরকার মুজিব নগর সরকার নামেও আখ্যায়িত হয়ে থাকে। এ সরকারের রাষ্ট্রপতি পদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। এ সরকারের নেতৃত্বে এবং বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সহযোগিতায় পরিচালিত হয় দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। অবশেষে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বিজয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে অবনত মসৱকে দাঁড়িয়েছিল হানাদার পাকিসৱানি বাহিনী। পাকিসৱানি জেনারেল নিয়াজী তার ৯৩ হাজার সৈন্য এবং বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন এই দিনে। আর সেই থেকে এই দিনটি হয়ে ওঠে আমাদের বিজয়ের স্মারক- ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day