মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রাজ্জাক আর নেই

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রাজ্জাক আর নেই।

দীর্ঘ রোগভোগের পর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্যের। শুক্রবার লন্ডন সময় বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে আব্দুর রাজ্জাকের লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে মৃত্যুর ঘোষণা দেন লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা, বাংলাদেশে সময় তখন রাত ৯টা ৫০ মিনিট। লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী হাসপাতালে উপস্থিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। যকৃৎ (লিভার), বৃক্ক (কিডনি) ও ফুসফুসে জটিলতা নিয়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজ্জাক। যকৃৎ প্রতিস্থাপনের জন্য লন্ডন গেলেও পরে অন্য দুটি অঙ্গেও সমস্যা দেখা দেয়। একাত্তরে মুজিব বাহিনীর অন্যতম পুরোধা এবং ’৯০ এর দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাািবতে সূচিত আন্দোলনের সংগঠক এবং গণআদালতের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজ্জাকের বয়স হয়েছিলো ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী ফরিদা রাজ্জাক এবং দুই ছেলে রেখে গেছেন। রাজ্জাকের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্ডায়। ইমাম উদ্দিন ও আকফতুন নেছার সন্তান রাজ্জাক যতবার সেখান থেকে নির্বাচন করেছিলেন, ততবারই বিজয়ী হন। বর্তমান সংসদেও প্রতিনিধিত্ব করছিলেন রাজ্জাক, পাশাপাশি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনি। রাজ্জাক লাইফসাপোর্টে থাকলেও বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজ্জাকের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করে এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতার শোকবার্তার কথাও জানায়। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে কেউ তখন পর্যন্ত এ বিষয়ে মুখ খুলছিলো না। রাজ্জাকের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী তোফায়েল আহমেদ সন্ধ্যা ৭টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এক ঘণ্টা আগেও যোগাযোগ করেছিলাম। তখন পর্যন্ত লাইফসাপোর্ট খোলা হয়নি।” রাজ্জাকের চিকিৎসার খোঁজ-খবর লন্ডন দূতাবাসের কর্মকর্তারা শুরুতে না নেওয়ায় তা নিয়ে সংসদে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও রাজ্জাকের দীর্ঘদিনের সহকর্মী তোফায়েল। রাজ্জাক ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে বাকশাল নামে আলাদা দল নিয়েই চলেন তিনি। ’৯০ এর দশকে বাকশাল আওয়ামী লীগে একীভূত হয়। আওয়ামী লীগে ফেরার পর সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান পান রাজ্জাক। দীর্ঘদিন দলের নীতি-নির্ধারণী এই ফোরামে দীর্ঘদিন ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকারে পানিসম্পদমন্ত্রীও করা হয় তাকে। গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তির জন্য স্মরণীয় তিনি। তবে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর আওয়ামী লীগের যে কজন নেতা সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান, তার মধ্যে রাজ্জাকও ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি রাজ্জাকের। এরপর ২০০৯ সালের দলের সম্মেলনে নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্যপদও হারান তিনি। তাকে করা হয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা