শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত : সবার কণ্ঠেই আওয়াজ ছিল দ্রম্নত হোক যুদ্ধাপরাধ বিচার



শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত : সবার কণ্ঠেই আওয়াজ ছিল দ্রম্নত হোক যুদ্ধাপরাধ বিচার








ফুলেল শ্রদ্ধা আর বিনম্র ভালোবাসায় দেশের শ্রেষ্ঠ সনৱান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করলো জাতি। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে দাঁড়িয়ে সবার অঙ্গীকার ছিল রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়বো। সবার কণ্ঠেই ছিল এক আওয়াজ, দ্রম্নত হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের দ্রম্নত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানান তারা।যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। কাকডাকা ভোরে জনতার ঢল নামে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ আর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসেন এবং ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও সাংসদ এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা উপসি'ত ছিলেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। মুক্তিযোদ্ধারা তার কাছে বিভিন্ন অনুযোগ জানান। প্রধানমন্ত্রী তাদের সেগুলো পূরণের আশ্বাস দেন।মুক্তিযোদ্ধাদের একজন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রম্নত শেষ করার দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষও তা-ই চায়।প্রধানমন্ত্রীর পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকাল ৭টার পর স্মৃতিসৌধ সর্বসৱরের মানুষের জন্য খুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এ সময় দলটির মহাসচিব রম্নহুল আমিন হাওলাদার তার সঙ্গে ছিলেন।সকাল পৌনে ৮টার দিকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পসৱবক অর্পণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলামসহ সিনিয়র নেতারা।তারপর একে একে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরম্ন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। শহীদ পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান হারানো স্বজনদের প্রতি। এছাড়াও দিনভর বিভিন্ন সংগঠন এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ স্মৃতিসৌধসহ বুদ্ধিজীবীনিধনযজ্ঞস'ল রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢল নামে। এ সময় ফুলেল শ্রদ্ধায় রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ ভরে ওঠে। আর এখানে আসা মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে দেশ গড়ার শপথ নিলেন। তাদের মনে ৪০ বছর ধরে যে ক্ষত জমেছে তাকে মুছে ফেলতে সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রম্নত বাসৱবায়ন করার আহ্বান জানান তারা। নানা সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে- এ কথা উলেস্নখ করে বধ্যভূমিতে আসা সাধারণ মানুষ এর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন।৭১-এর এইদিনে দেশকে মেধাশূন্য করতে রাজাকার, আল-বদর বাহিনীরা বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে এখানেই হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও এখনো এসব হত্যার বিচার হয়নি। দেশের মানুষের জোরালো দাবি সত্ত্বেও কেন তা বাসৱবায়িত হয়নি সাধারণ মানুষের মনে এ প্রশ্নই তাড়া করছে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : সকাল সাড়ে ৭টায় দলের কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল সাড়ে ৭টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। সকাল ৯টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আনৱর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্ব আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।জাতীয় পার্টি : জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পসৱবক অর্পণ করেন। এ সময় এইচ এম এরশাদ বলেন, আমরা চাই বিচার হোক। কিন' বিচারের কার্যক্রম খুব ঢিমেতালে চলছে।বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি : জাতির শ্রেষ্ঠ সনৱান বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সকালে পার্টির সভাপতি মনজুরম্নল আহসান খান এবং সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।মইনুদ্দীন খান বাদলের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে ফুল দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন দলের পক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জাসদের নেতা আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে বেদিতে ফুল দেন একদল নেতাকর্মী। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষে ফুল দিতে আসেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারম্নন হাবিব ও সুব্রত ঘোষ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে ৭টায় সকল হল, উপাচার্য ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হওয়া, সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস'ান, জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধ ও বিশ্বদ্যিালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধন : গতকাল সকালে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাদের হত্যাকা-ে সহযোগী রাজাকার, আলবদর বাহিনীর দৃষ্টানৱমূলক শাসিৱর দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে উপসি'ত ছিলেন স'ানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তারানা হালিম, যুগ্ম-সম্পাদক অরম্নণ সরকার রানা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুসহ জোটের নেতারা।শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সিপিবি, নজরম্নল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, মনন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন, শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বসৱরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, চিত্রপ্রদর্শনী। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও এফএম রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, সরকারের সংশিস্নষ্ট মন্ত্রীবর্গ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বাণী প্রদান করেছেন। রেডিও-টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারিত হ"েছ। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা