আজ বাঙালির শোকের দিন



আজ বাঙালির শোকের দিন




বাঙালির শোকের দিন ১৫ আগস্ট আজ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির জাতীয় জীবনে শোকাচ্ছন্ন রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত এক কালো দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোরে একদল রক্তলোলুপ ষড়যন্ত্রকারীর নীলনকশা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর আদর্শচ্যুত কয়েকজন হিংস্র লোভী ঘাতক ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটিতে সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। বিগত ৩৬টি বছর ধরে সেই ঐতিহাসিক বাড়িটির দেয়ালে দেয়ালে, সিঁড়িতে, সারাবাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে আছে নির্মম সেই হত্যাকা-ের নিদর্শন। বছর ঘুরে আজ আবার এসেছে বেদনাবিধুর সেই ১৫ আগস্ট। তবে এবার এক নতুন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে জাতির জনকের শাহাদাতবার্ষিকী।






অবৈধ ৰমতা দখল চিরতরে রদকল্পে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে মহান জাতীয় সংসদ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির চির অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্ভাসিত হয়ে সংবিধান থেকে অপরাজনীতির অগণতান্ত্রিক স্বৈর ধারাকে অপসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতিগত কলঙ্ক মোচনের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী, জাতিদ্রোহী, দেশদ্রোহী, স্বদেশের মুক্তিকামী মানুষের বির্বদ্ধে ভিনদেশী ঔপনিবেশিক দখলদারদের পক্ষাবলম্বনকারী অর্থাৎ মানবতার বির্বদ্ধে অপরাধী ’৭১-এর নরঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুর্ব হয়েছে। নতুন এই প্রেক্ষাপটে শোককে শক্তিতে পরিণত করার নতুন প্রেরণায় ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। জাতি আজ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শপথ নেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এ উপলক্ষে গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। জাতীয় শোক দিবসে সকল সরকারি ও বেসকারি ভবন এবং বিদেশী দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলৱুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে পৃথক বাণী দিয়েছেন।



’৭১ সালের মহান স্বাধীনতা একদিকে যেমন বাঙালি জাতির জীবনে নতুন এক আস্বাদ এনে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি স্বাধীন দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিবর্তন প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা, সমৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রহণ করেছিলেন নানা উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুর গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সদ্য স্বাধীন দেশকে যখন দ্র্বত উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই শুর্ব হয় ষড়যন্ত্র। আন্তর্জাতিক কুচক্রী ও ষড়যন্ত্রকারীদের একটি গোষ্ঠী, সেনাবাহিনীর ক্ষমতালিপ্সু কতিপয় সদস্য এবং সর্বোপরি দুর্নীতিগ্রস্ত মুনাফালোভী কিছু ব্যক্তি এই বজ্রকণ্ঠ অমিততেজী নেতাকে অপসারণের নীলনকশা প্রণয়ন করে। তারা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুকে বাংলার মাটিতে জীবিত অবস্থায় অপসারণ সম্ভব নয়। আর তা না হলে তাদের শেষ পর্যন্ত এই দেশ ছাড়তে হবে। একইভাবে আন্তর্জাতিক তাঁবেদারিতে অনভ্যস্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিরূপ ও নাখোশ মহলও শামিল হয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞের নকশা প্রণয়নে। এরই জের ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ ডিঙিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন তারই দলের একটি অংশ। খন্দকার মুশতাক সেই ষড়যন্ত্রীদেরই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এই নির্মম হত্যাকা-ের বিচার যাতে না করা যায় সেই কুখ্যাত ইনডেমনিটিও জারি করেছিলেন। বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই কাকডাকা ভোরে কী ঘটেছিল আজ সারা পৃথিবীজুড়ে তা রক্তাক্ত দলিল হয়ে আছে। যে ষড়যন্ত্রময় রাজনীতির রক্তবীজ রোপিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে, আজ তা বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আজো অব্যাহত আছে সেই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা। বাঙালির ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ঘটানো হয়েছে ইতিহাসের নির্লজ্জ বিকৃতি। কিন্তু বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায়নি। শোকাবহ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বেদনাবিধুর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস স্মরণ ও পালন করছে। যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিশু, নর-নারী, আবালবৃদ্ধবনিতা, সকল শ্রেণী-পেশার শোকাহত মানুষের ঢল নামছে। সমগ্র জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, রাষ্ট্রপিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যবর্গকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের হত্যাকা-ের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। মানবতার শত্র্ব, ঘৃণ্য নরপিশাচ ৫ আত্মস্বীকৃত খুনির ফাঁসির দ-াদেশ কার্যকর হয়েছে। বিদেশে পলাতক বাকি খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যারা এক সময় নিজেদের বিচারের ঊর্ধ্বে ভেবেছিল এবং কেউ তাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না বলে দম্ভ করেছিল, এই বিচার ও দ-াদেশ কার্যকর করার ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলার মাটিতে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে যতো ক্ষমতাধরই হোক না কেন, ইতিহাসের অমোঘ বিধানানুযায়ী শাস্তি ভোগ থেকে খুনিরা কেউই রেহাই পাবে না। এছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার পাশাপাশি হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের অপরাজনীতি চালু হয়েছিল।



রাতের অন্ধকারে বন্দুকের নল উঁচিয়ে সংবিধান পদদলিত করে অবৈধ পথে ক্ষমতা দখল ও দখলিকৃত ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য সংবিধান পরিবর্তনের অশুভ ধারা সূচিত হয়েছিল। তা চিরতরে রদকল্পে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে মহান জাতীয় সংসদ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির চির অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্ভাসিত হয়ে সংবিধান থেকে অপরাজনীতির অগণতান্ত্রিক স্বৈরধারাকে অপসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতিগত কলঙ্ক মোচনের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী, জাতিদ্রোহী, দেশদ্রোহী, স্বদেশের মুক্তিকামী মানুষের বির্বদ্ধে ভিনদেশী ঔপনিবেশিক দখলদারদের পক্ষাবলম্বনকারী অর্থাৎ মানবতার বির্বদ্ধে অপরাধী ’৭১-এর নরঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুর্ব হয়েছে। উলিৱখিত পটভূমিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহতী আদর্শ তথা শ্রেণী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গরিব, দুঃখী সাধারণ সকল মানুষের উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সুখী-সমৃদ্ধ প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণ পরিশোধে বাঙালি জাতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই জাতির জনকের ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকীতে সকলের সম্মিলিত শপথ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লৰ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গৃহীত দিনবদলের কর্মসূচি তথা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন, গণতন্ত্র, শান্তি ও প্রগতির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি জাতীয় শোক দিবস উপলৰে আজ সোমবার সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানম-ির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধনামন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ, সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান এবং মোনাজাত অনুষ্ঠানে যোগদান। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। (ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে আগমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন)।



সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। সকাল সোয়া ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত এবং দুপুর দেড়টায় মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল (বাদ জোহর)। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফর উলৱাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ শেখ মোহাম্মদ আব্দুলৱাহ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফার্বক খান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আলতাফ হোসেন, শেখ হার্বন অর রশিদ, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও শ্রী সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া, সকাল ১১টায় মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সকাল ৮টায় মিরপুর গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান। সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টায় মের্বল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে প্রার্থনা অনুষ্ঠান। বাদ আছর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল ও ইফতার। ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেবেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা। সৈয়দ আশরাফের আহ্বান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজ ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য দল ও সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সকল শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।




৩৬ বছর আগে এইদিনে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজো ছেলে শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের ও পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেই রাতে আরও নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, রিন্টু ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল। তখন থেকেই আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দিনটি পালন করে আসছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এসে দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। এছাড়া জাতীয় পতাকা বিধি সংশোধন করে সরকার নির্ধারিত দিন ছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়েই দিনটি পালিত হয়ে আসছিল। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। সরকারও সে অনুযায়ী দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৫ আগস্ট ছুটির দিন ঘোষণা করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ বলে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন। এরপর '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, '৬৬-তে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা এবং '৬৮-তে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৬৯-এ ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিপ্লবী কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার চূড়ান্ত ডাক- 'এবারের সংগ্রাম-আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম- আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা যোগায়। তার নেতৃত্বেই দীর্ঘদিনের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা