জাতির নেতৃত্ব দিতে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
ঢাকা(সোমবার ২৬ মার্চ ২০১২, ১২ চৈত্র ১৪১৮, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩):- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে একটি গর্বিত জাতির প্রকৃত ইতিহাস জানতে আজ শিশুদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা শিশুদের উদ্দেশে বলেন, ভবিষ্যতে তোমরাই বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে। ফলে তোমাদেরকে জাতির মূল্যবান সন্তান হতে সকল ধরনের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যাতে বাংলাদেশ নিজস্ব মর্যাদা নিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু সমাবেশে ভাষণদানকালে একথা বলেন। শেখ হাসিনা সুন্দর নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এবং দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে শিশুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি শিশুদের প্রতি প্রগতিশীল মানসিকতা গড়ে তোলা এবং সমাজবিরোধী কোন কর্মকাণ্ড অথবা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত না হতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদেরকে ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে দৃঢ় নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার খেলাধূলা ও শরীরচর্চার জন্য যুবকদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে স্টেডিয়াম তৈরি করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, একদিন আমরাও ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জিতব, সেদিন আর বেশি দূরে নেই। পাশাপাশি আমরা ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধূলায় আমাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখব। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলাম ও ঢাকা জেলা প্রশাসক এম মুহিবুল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের শিশুদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি শিশুদের মার্চপাস্ট ও বর্ণাঢ্য শারীরিক কসরত প্রত্যক্ষ করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ ও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে প্রতিকৃতি দিয়ে সজ্জিত করা। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন দেশাত্মবোধক গান, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলিম, আমরা সবাই বাঙালি’ এই গান পরিবেশন করেন। তিনি স্টেডিয়াম ঘুরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শিশু ও তরুণদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাঙালি জাতি নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও ঔপনিবেশিক শক্তি নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করায় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বন্ধে নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ সে সময় তাদের যার যা ছিল তাই নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তুলতে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মসূচি গ্রহণ করায় পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
তিনি বলেন, প্রতিটি শিশু যাতে দেশের একেক জন মূল্যবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, এজন্য বঙ্গবন্ধু কর্মসূচি দিয়েছিলেন। অথচ ঘাতকরা তাঁর ছোট শিশু রাসেলসহ তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শেখ হাসিনা বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশের মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল এবং দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করে বলেন, গত তিন বছরে দারিদ্র্যতা ১০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে এবং শিক্ষার মানের উন্নতির সাথে শিক্ষার হার বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি মর্যাদাশীল অবস্থান তৈরি করতে। দেশের মূল্যবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার গৃহীত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে শিশুদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।