খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোঃ আবু সায়েম, জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদও অবৈধ খমতা দখলকারী।
অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথপ্রদর্শক জিয়া
সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ে আদালত বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করে তাদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন। তিনি সংবিধানকে করেছিলেন ক্ষতবিক্ষত। মূলত জিয়াই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ দেখিয়েছিলেন অন্যদের। আর তার উত্তরাধিকারী হিসেবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ।’
সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে গতকাল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ে আদালত বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করে তাদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন। তিনি সংবিধানকে করেছিলেন ক্ষতবিক্ষত। মূলত জিয়াই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ দেখিয়েছিলেন অন্যদের। আর তার উত্তরাধিকারী হিসেবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ।’
সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে গতকাল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ক্যাঙ্গার" কোর্টের (বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল) মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও জাতির জনকের খুনিদের পুরষ্কৃত ও পুনর্বাসিতও করেছেন তিনি। এমনকি খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে মিলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যার বিচারের পথ র"দ্ধ করেন।
সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী ও সামরিক শাসনসংক্রান- এক রায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট একথা উলেস্নখ করেন। এ রায়ে হাইকোর্ট এ উপমহাদেশের সামরিক শাসন এবং ১৯৪০ সাল থেকে বাংলাদেশের উলেস্নখযোগ্য ইতিহাস তুলে ধরেন।
রায়ে আদালত বলেন, জাতির জনক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে একটি অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গঠনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাকে হত্যা করার পর দেশে অসি'রতা নেমে আসে। সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন। তার পরে আরেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেন। অবৈধ উপায়ে জিয়া ক্ষমতা দখলের ধারাবাহিকতায় এরশাদ অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন।
রায়ে বলা হয়, ১৯৪০ সালের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস-ান নামের একটি রাষ্ট্র গঠন করা হয়। এটি কোনো কার্যকর তত্ত্ব না হওয়া, শোষণ ও পশ্চিম পাকিস-ানিদের ড়্গমতা লিপ্সার কারণে এ রাষ্ট্র ভেঙে যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালিদের রাষ্ট্রীয় ড়্গমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন' পাকিস-ানিরা রাষ্ট্রড়্গমতা দখলে রাখতে চক্রান- শুর" করে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অতর্কিতে বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই রাত বাংলাদেশের ইতিহাসে উলিস্নখিত কালো রাত। রায়ে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া আর কিছু নয়। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এম এ হান্নান প্রথম এ ঘোষণা পাঠ করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
রায়ে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের স'পতি শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশী-বিদেশী শক্তি পেছনের দরজায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। পাকিস-ানের এদেশীয় দোসররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিদেশী শক্তির সাহায্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সড়্গম হয়। এরপর দেশে অসি'রতার সৃষ্টি হয়। অবৈধভাবে প্রথম মোশতাক রাষ্ট্রীয় ড়্গমতা দখল করে। তারপর জিয়া এবং জিয়ার ধারাবাহিকতায় সায়েম অবৈধভাবে রাষ্ট্রড়্গমতা দখল করেন। জিয়া সামরিক শাসন জারি করে ক্যাঙ্গার" কোর্টের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দেন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও জাতির জনকের খুনিদের পুরষ্কৃত ও পুনর্বাসিত করা শুর" করেন। জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিদেশ পাঠিয়ে দেন। শাহ আব্দুল আজিজ, মোস-াফিজুর রহমানসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রের শাসনকাজের অংশীদার করেন।
জিয়ার সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি মূলনীতি পরিবর্তনসহ সংবিধান তছনছ করেছেন। এমনকি ভুল প্রমাণিত হওয়া দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে আসেন। জিয়ার মতো এরশাদও অবৈধভাবে রাষ্ট্রড়্গমতা দখল করেন। তিনি ১৯৮২ সালে সামরিক আইন জারি করেন ও এর অধীনে ১৯৮৬ সাল পর্যন- রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রের সর্বো"চ আইন সংবিধানের ওপরে সামরিক আইনের স'ান দেন এরশাদ। তিনি তার সব কর্মকাণ্ডকে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেন। তবে জিয়ার মতো তিনি সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করেননি।
মোশতাকের সহায়তায় জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের পথ বন্ধ করেছিলেন বলেও রায়ে উলেস্নখ করা হয়েছে।
এরশাদের আমলে সামরিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সিদ্দিক আহম্মেদ বাদী হয়ে গত ২৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ১৯৮৪ সালের ২৪ ডিমেস্বর চট্টগ্রামে দায়ের করা একটি খুনের মামলায় তাকে আসামি করা হয়। এরশাদের জারি করা এক সামরিক ফরমানের মাধ্যমে এ মামলাটি চট্টগ্রাম দায়রা জজ আদালত থেকে সামরিক আদালত স'ানান-র করা হয়। সামরিক আদালত এ মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এ রিটে সংবিধানের সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার মামলাটির পুনর্বিচারের আবেদন জানানো হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট র"ল জারি করেন। রিটের চূড়ান- শুনানি শেষে গতকাল রায় দেয়া হয়
খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিউক গ্রেফতার :
খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউককে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার করেছে সিআইডি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সংবাদ'কে জানান, সাইফুল ইসলাম ডিউককে গত মঙ্গলবার ও বুধবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস, সরবরাহ ও ইন্ধনদাতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।সিআইডি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার সে সময়কার ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুল ইসলাম ডিউককে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেদিনই ২১ আগস্ট হামলার আগে ও পরে সংঘটিত বিভিন্ন ব্যাপারে তথ্য দেয় ডিউক। পরে তাকে বুধবার বিকেলে আবারও সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। ওই সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস, সরবরাহ ও নৃশংস এ হামলার পরিকল্পনাকারী ও ইন্ধনদাতাদের ব্যাপারে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে সিআইডির কাছে থাকা বিভিন্ন তথ্য ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে ডিউকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে বুধবার রাত ২টার পর তাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। এদিকে গতকাল দুপুরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সাইফুল ইসলাম ডিউককে আদালতে পাঠায় সিআইডি এবং ৭ দিনের রিমান্ড চায়। তাকে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালতে উঠালে বিএনপি সমর্থিত তার পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন জানান। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ডিউককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে সিআইডির পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, এ হামলা মামলায় গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় জড়িত থাকার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দেয়। মামলাটি অধিকতর তদন্ত পর্যায়ে প্রকাশ পায়। আসামি লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ঘটনায় জড়িত পলাতক অন্য আসামিদের সঙ্গে সাইফুল ইসলাম ডিউকের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। মামলার অন্যতম পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে প্রেরণের বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মামলার অধিকতর তদন্তকালে বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি এবং সাক্ষীদের জবানবন্দিতে ডিউকের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তাই আসামি সাইফুল ইসলাম ডিউককে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সংগ্রহ, সরবরাহ ও মদদদাতা সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহসহ জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিলের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ। মিছিল পূর্ব সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শেষ হলেও একের পর এক গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। এতে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্পিস্নন্টারে ক্ষতবিক্ষত হয় কয়েকশ' মানুষ।সূত্র মতে, সাইফুল ইসলাম ডিউক সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময় বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনের অন্যতম কুশিলব ছিলেন এই ডিউক। হাওয়া ভবনে তারেক জিয়ার পরই তিনি সেকেন্ড ম্যান হিসেবে ক্ষমতাধর ছিলেন। হাওয়া ভবনের সব ধরনের পরিকল্পনায় তিনি জড়িত ছিলেন। সিআইডি কর্মকর্তারা ২১ আগস্টের ঘটনায় গ্রেনেডের উৎস, সরবরাহকারী ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজতে অধিকতর তদন্ত শুরু হলে বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। তদন্তে বেরিয়ে আসে ডিউক ও তার ভায়রাভাই (তৎকালীন সময়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার মিলে জঙ্গি তাজউদ্দিনকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট আরও অনেককেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে সিআইডি সূত্র জানায়।
খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউককে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার করেছে সিআইডি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সংবাদ'কে জানান, সাইফুল ইসলাম ডিউককে গত মঙ্গলবার ও বুধবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস, সরবরাহ ও ইন্ধনদাতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।সিআইডি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার সে সময়কার ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুল ইসলাম ডিউককে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেদিনই ২১ আগস্ট হামলার আগে ও পরে সংঘটিত বিভিন্ন ব্যাপারে তথ্য দেয় ডিউক। পরে তাকে বুধবার বিকেলে আবারও সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। ওই সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস, সরবরাহ ও নৃশংস এ হামলার পরিকল্পনাকারী ও ইন্ধনদাতাদের ব্যাপারে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে সিআইডির কাছে থাকা বিভিন্ন তথ্য ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে ডিউকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে বুধবার রাত ২টার পর তাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। এদিকে গতকাল দুপুরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সাইফুল ইসলাম ডিউককে আদালতে পাঠায় সিআইডি এবং ৭ দিনের রিমান্ড চায়। তাকে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালতে উঠালে বিএনপি সমর্থিত তার পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন জানান। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ডিউককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে সিআইডির পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, এ হামলা মামলায় গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় জড়িত থাকার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দেয়। মামলাটি অধিকতর তদন্ত পর্যায়ে প্রকাশ পায়। আসামি লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ঘটনায় জড়িত পলাতক অন্য আসামিদের সঙ্গে সাইফুল ইসলাম ডিউকের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। মামলার অন্যতম পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে প্রেরণের বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মামলার অধিকতর তদন্তকালে বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি এবং সাক্ষীদের জবানবন্দিতে ডিউকের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তাই আসামি সাইফুল ইসলাম ডিউককে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সংগ্রহ, সরবরাহ ও মদদদাতা সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহসহ জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিলের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ। মিছিল পূর্ব সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শেষ হলেও একের পর এক গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। এতে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্পিস্নন্টারে ক্ষতবিক্ষত হয় কয়েকশ' মানুষ।সূত্র মতে, সাইফুল ইসলাম ডিউক সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময় বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনের অন্যতম কুশিলব ছিলেন এই ডিউক। হাওয়া ভবনে তারেক জিয়ার পরই তিনি সেকেন্ড ম্যান হিসেবে ক্ষমতাধর ছিলেন। হাওয়া ভবনের সব ধরনের পরিকল্পনায় তিনি জড়িত ছিলেন। সিআইডি কর্মকর্তারা ২১ আগস্টের ঘটনায় গ্রেনেডের উৎস, সরবরাহকারী ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজতে অধিকতর তদন্ত শুরু হলে বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। তদন্তে বেরিয়ে আসে ডিউক ও তার ভায়রাভাই (তৎকালীন সময়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার মিলে জঙ্গি তাজউদ্দিনকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট আরও অনেককেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে সিআইডি সূত্র জানায়।