প্রবাসীরা জানুয়ারি থেকেই ভোটার হতে পারবেন
প্রবাসীরা জানুয়ারি থেকেই ভোটার হতে পারবেন
প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দ্বৈত নাগরিকদের ভোটার করতে সরকার আইন সংশোধন করলে নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারিতেই তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেবে।
প্রাথমিকভাবে বিদেশে ৪৮টি দূতাবাস, মিশনের মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হবে। আগামী ১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি দ্বৈত নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকাভুক্তির কাজ চলবে। এক মাস ভোটার তালিকাভুক্তির কাজ চলবে। নির্বাচন কমিশন সরাসরি তাদের ভোটার তালিকাভুক্তি করবে না। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।ভোটার হওয়ার পদ্ধতি : প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকাভুক্ত করতে বিশেষ ফরম তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দ্বৈত নাগরিকরা আবেদন করে ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন। নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, ভোটার হওয়া সম্পর্কিত সবকিছু বিধিমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দূতাবাস থেকে পাওয়া তালিকা নির্বাচন কমিশনের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই শেষে দূতাবাসে ভোটার নিবন্ধন ফরম পাঠানো হবে। আগ্রহীরা দূতাবাসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি, বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারবেন। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত হতে দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে সত্যায়িত দুই কপি স্টা্যাম্প সাইজের ছবিসহ পাসপোর্টের প্রথম ৬ পৃষ্ঠা জমা দিতে হবে। এরপর ছবি, পাসপোর্টের কপি ও নিবন্ধন ফরম নির্বাচন কমিশনের কাছে আবারও পাঠাবে দূতাবাস। এসব প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনকমিশন তাদের নাম ভোটার তালিকাভুক্ত করবে। নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন সমকালকে বলেন, যে কেউ দেশে এসে আবেদন করতে পারবেন। ভোটার হতে বাধ্যবাধকতা নেই : প্রবাসে প্রায় ৬৫ লাখ বাংলাদেশি বৈধভাবে অবস্থান করছে। অবৈধভাবে আছে প্রায় সমসংখ্যক। বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্তি কার্যক্রম চালু হলে যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছে তারা অসুবিধার মধ্যে পড়বেন কি না, বা বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে তাদের নাম তালিকাভুক্ত হবে কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে যারা আছেন তাদের সম্পর্কে কী করা হবে সে বিষয় এমনও অমীমাংসিত। এ মুহূর্তে যারা দেশে এসে ভোটার হতে চাইবে শুধু তাদেরই ভোটার তালিকাভুক্ত করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইন শাখার এক কর্মকর্তা জানান। এ বিষয়ে ছহুল হোসাইন বলেন, সবাইকে যে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে এমনটা নয়। কেউ ইচ্ছা করলে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারেন। আবার বিদেশে ভোটার না হয়ে দেশে ফিরেও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারেন।ছহুল হোসাইন বলেন, আবেদনকারীকে স্বদেশের ঠিকানায়ই ভোটার করা হবে।নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা : প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি-না এমন প্রশ্নে ছহুল হোসাইন বলেন, সংবিধানে বাধা আছে বলে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং যারা দ্বৈত নাগরিক তারা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকদের সংসদ নির্বাচন করার সুযোগ নেই। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে তারা ইচ্ছা করলে স্থানীয় সব ধরনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে প্রবাসী মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন। তবে তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তারা। একই আবেদন জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত নেতৃবৃন্দ। ভোটাধিকার প্রয়োগ : ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির পর প্রবাসীরা কী করে ভোট দেবেন সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া দেশে অবস্থান করলে তারা যে কেন্দ্রে ভোটার হয়েছেন সে কেন্দ্রেই ভোট দেবেন। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে হলে ভোটারকে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। জনবল সমস্যার কারণে এখনই বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হবে না।