সংবিধানের মূল স-ম্ভগুলো কোনভাবেই পরিবর্তনযোগ্য নয় : প্রধান বিচারপতি



সংবিধানের মূল স-ম্ভগুলো কোনভাবেই পরিবর্তনযোগ্য নয় : প্রধান বিচারপতি




মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, আদর্শ ও চিন-াধারা মাথায় রেখে সংবিধান সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছেন


প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক






তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের কথা চিন-া করতে হবে লাখো মুক্তিযোদ্ধা, লাখো শহীদের কথা মাথায় রেখে। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন-র্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নবীন আইনজীবীদের সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। বার কাউন্সিলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো কোনভাবেই পরিবর্তনযোগ্য নয়। বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি থেকে যেন সামান্যতম পদস্খলন না হয়। এছাড়া বিচারপতিদের অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) বিষয়েও কথা বলেন তিনি। বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার আইনজীবীকে সনদ প্রদান করা হয়।



প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন ১৯৭১ সালে লাখো শহীদ। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, জীবন দিয়েছেন তাদের রক্তের আকরে আমাদের সংবিধান লেখা হয়েছে। সেই মুক্তিবাহিনী যারা নিজের জীবন বাজি রেখে এই বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে নিয়ে এসেছে, এই মুক্তিবাহিনী যারা আমাদের দেশবাসীকে একটা পতাকা উপহার দিয়েছে, পৃথিবীর বুকে একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জন্ম দিয়েছে। একটা মানচিত্র ও জাতীয় সংগীত উপহার দিয়েছে। যখনই আমরা আমাদের সংবিধান সংশোধনের কথা চিন-া করব, আমরা যেন সেই লাখো মুক্তিযোদ্ধা, লাখো শহীদের কথা চিন-া করি ও মাথায় রাখি। তারা কী চিন-া করে, কী উদ্দেশ্যে কোন স্বপ্নে এই বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলেন, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এই বাংলাদেশ লাখো মুক্তিযোদ্ধার সৃষ্টি। এগুলোর প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। অন্য কোনভাবে নয়। আমরা তাদের আত্মত্যাগের সুবিধাভোগী (বেনিফিশিয়ারি) মাত্র। প্রধান বিচারপতি বলেন, ’৭২ সালে যে বেসিক প্রিন্সিপালের (মূলনীতি) আমাদের পূর্বপুর"ষরা চিন-ায় রেখেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা চিন-ায় রেখেছিলেন, সেই বেসিক প্রিন্সিপাল থেকে এতটুকু পদস্খলন আমাদের কাম্য নয়। আমাদের বেসিক স্ট্রাকচার (মৌলিক কাঠামো) অবশ্যই পরিবর্তনযোগ্য নয়। সংবিধানের বেসিক কাঠামো কেউই পরিবর্তন করতে পারে না। ইমপিচমেন্ট অব দ্য জাজেস (বিচারপতিদের অভিশংসন) প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক বলেন, সংসদ সদস্যরা, পাল্টার্মেন্ট এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান- নেবেন-এটা তাদের ব্যাপার। তাদের ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তারা যে কোন সিদ্ধান- নিতে পারেন। তবে এর একটু ইতিহাস আছে।



ইমপিচমেন্ট কিভাবে হল, এটাও জানা দরকার। মুঘল আমলে কিংবা যে কোন সময়ে সম্রাট, রাজা-বাদশা বা কিং তারা তাদের খুশিমতো কাজী, বিচারক, বিচারপতি নিয়োগ করতেন এবং খুশিমতো তাদের বরখাস- (ডিসমিস) করতেন। রাজারা তাদের খুশিমতো নিয়োগ দিতে পারতেন এবং খুশিমতো, এমনকি কোন নোটিশ ছাড়াই এক সেকেন্ডের কথায় তাদের গর্দানও চলে যেতে পারত।



স্যার থমাস ম্যুর এর একটা উদাহরণ। স্যার এডওয়ার্ড কুকের উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৬১৭ সালে তিনি বরখাস- হন প্রথম কিং জেমস দ্বারা। সেই সময় রাজাদের এক"ছত্র ক্ষমতা ছিল। এরপর এলো অ্যাক্ট অব সেটেলমেন্ট ১৭০১। এই প্রথম ঠিক হল, না, রাজার খুশিমতো বিচারকদের অব্যাহতি দেয়া সম্ভব নয়। বিচারকদের যদি উনি একবার নিয়োগ দেন, তাহলে তিনি কোন বিচারপতিকে বরখাস- করতে পারবেন না। যদি না কোন সুনির্দিষ্ট অসদাচরণের অভিযোগ না থাকে। সেটা কে দেখবে? দেখবে সংসদ। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যদি ইমপিচমেন্টের পক্ষে থাকে, তাহলে একজন সুপিরিয়র কোর্টের জাজকে ইমপিচ করা যাবে, অন্যথায় নয়। এই প্রথম রাজার ক্ষমতা থেকে প্রজাদের মধ্যে ক্ষমতাটা চলে এলো। এর ইতিহাস এজন্য গুর"ত্বপূর্ণ যে সেই সময় রাজার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই হাউস অব পার্লামেন্ট এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিল। এভাবেই ইমপিচমেন্টের অধিকারটা সংসদের হাতে আসে। একজন বিচারপতিকে ক্ষতিগ্রস- করার জন্য নয়। বরং বিচারপতিদের রক্ষা করার জন্য রাজার দ্বারা ক্ষতিগ্রস- হওয়া থেকে রক্ষার জন্য।



প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়র"ল হক বলেন, যে কোন বিচারক বা বিচারপতির বড় অস্ত্র হ"েছ জনগণের আস্থা। জনগণের আশা-ভরসার স'ল হ"েছন বিচারপতিরা। এটা সেই ১৭০০ ও ১৮০০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বুঝত। আজও সর্বত্রই বোঝে। বিচারকদের নিয়ে, বিচারব্যবস'া নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। কিন' তার পরও কিন' সবাই বিচারালয়েই আসে। বিচারকদের কাছেই আসে। এর কারণ হ"েছ, এখনও বিচারকরা জনগণের আস'া হারাননি। এখনও মানুষ মনে করে, সুপ্রিমকোর্ট বা জেলা আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব। প্রধান বিচারপতি প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, জনগণের এ আস'া আমরা কিছুতেই অবসান হতে দেব না। বিচারকদের প্রধান দায়িত্ব হ"েছ ন্যায়বিচার কায়েম করা। আজকাল প্রায়ই আমি কথাটা শুনি, রিলিফ দিতে হবে। রিলিফ দেয়াটা কোন বিচারকের দায়িত্ব নয়। তাদের দায়িত্ব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ব্যক্তিগত চিন-াধারা কোনভাবেই যেন বিচারিক চিন-াকে প্রভাবিত না করে সেটা দেখার দায়িত্ব বিচারপতিদের, বিচারকদের এবং সে ব্যাপারে সর্বোতভাবে সহায়তা করার দায়িত্ব আইনজীবীদের। এখানে উল্লেখ্য, আইন বিশেষজ্ঞদের মত, সংবিধানের সত্তর অনু"েছদের সংশোধন না করে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া হলে তা অর্থবহ হবে না। কারণ সংসদ সদস্যদের নিজেদের ই"ছায় নয়, দলের সিদ্ধানে-ই কোন বিচারপতির অভিশংসনের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিতে হবে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা