জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ জানুয়ারি বৃহষ্পতিবার ঢাকায় বর্তমান সরকারের দু‘বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রিয় দেশবাসী, আস্‌সালামু আলাইকুম। ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা নিন। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিজয়ী করেছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি। আজ সরকারের দুই বছর পূর্ণ হল। এ সময় সরকার পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতীয় ৪-নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানের প্রতি। আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমমর্মিতা জানাই। আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, আমার তিন ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শহীদ শেখ জামাল ও দশ বছরের শহীদ শেখ রাসেলকে। সে রাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল শহীদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
স্মরণ করছি, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ শহীদ ২২ নেতা-কর্মীকে। স্মরণ করছি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে। গত বছর জুনে রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১২১ জনসহ বিগত এক বছরে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। প্রিয় দেশবাসী, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ’রূপকল্প ২০২১’ এর প্রতি আস্থা স্থাপন করে আপনারা আমাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি এবং আমার সহকর্মীগণ আপ্রাণ চেষ্টা করছি আপনাদের আস্থার প্রতি সমমান দেখিয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের। আমরা ২ বছরে কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি, তার বিচারের ভার আপনাদের। তবে আপনাদেরকে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রথম ২ বছর আর আমাদের গত দুই বছরের মধ্যে তুলনা করতে অনুরোধ করব। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ৫ বছরে এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছিল। বিদেশে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে। তাদের রেখে যাওয়া জঞ্জাল দূর করে বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে স্থবিরতা কাটিয়ে দেশকে সচল করা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা চেষ্টার ত্রুটি করছি না এবং অনেক সফলতাও অর্জন করেছি। অর্থনৈতিক অবস্থায় গতিশীলতা এনেছি। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। মানুষের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সফল হয়েছি। ২ বছর আগে আমরা যখন সরকার গঠন করেছিলাম সে সময় চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ছিল আকাশচুম্বী। আমরা জিনিসপত্রের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছিলাম। যে চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে তা ১৮/২০ টাকায় নেমে আসে। পরবর্তীতে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য আমরা চালের দাম বাড়িয়ে ২৮ টাকা করি। ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কী কারণে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। আমাদের নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখবেন না। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে উৎপাদন করুন। সরকার সহায়তা দেবে। আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমজীবী মানুষের বেতন বৃদ্ধি করেছি। মানুষের আয়ও দেড় থেকে দুই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ এখন উদার, গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ এমডিজি এওয়ার্ড অর্জন করেছে। এ অর্জন গোটা দেশবাসীর। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ’দি ইকোনোমিস্ট’, ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল এবং বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১০ অনুযায়ী ৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রিয় দেশবাসী, ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতার পাঁচ বছর পূর্ণ করি, তখন দেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎসহ সকল সেবাখাত সুদৃঢ় অবস্থানে ছিল। মুল্যস্ফীতি ১.৫৯ শতাংশ, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বাক্ষরতার হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছিল। এছাড়া, এসব খাতে আমরা ব্যাপক জন-বান্ধব কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আমাদের অসমাপ্ত কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি বহু অনুমোদিত প্রকল্প বাতিল করে। ফলে দেশ ও জাতির যথেষ্ট ক্ষতি হয়। আজকে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ-জ্বালানির যে তীব্র সঙ্কট, তার মূলে রয়েছে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের চরম ব্যর্থতা এবং এখাতে ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতি। তবে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে সংকট কাটিয়ে উঠছি। তাদের সময়ে ৫ বছর দেশে এক মেগাওয়াট বিদ্যুতও উৎপাদিত হয়নি। কিন্তু লুটপাট হয়েছে হাজার কোটি টাকা। আপনারা জানেন, একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে ৩-৪ বছর সময় লাগে। বিদ্যুতের আশু চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা তাই অতি দ্রুত, মাঝারি এবং দীর্ঘ-মেয়াদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এ পর্যন্ত মোট ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে ২ হাজার ৯৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ৩ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা-সম্পন্ন আরও ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে আরও ২ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। আমরা আগামী ৫ বছরে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কর্মসূচি নিয়েছি। গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি আমরা তরল জ্বালানি, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি। রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে পর্যায়ক্রমে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভূটান ও মায়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালের মধ্যে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়েও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫ লাখ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিএফএল বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। আরও এক কোটি ৭৫ লাখ সিএফএল বাল্ব বিতরণ করা হবে। ২০০৯-এ গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত মাসে গ্যাস উৎপাদন দৈনিক ২০৩৫ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান, আবিষকৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন কূপ খননসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১২ সালের মধ্যে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই বছরে আমরা যত কাজ করেছি, এটা কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষেই সম্ভব। অতীতে কোন সরকারের পক্ষেই এত উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি। প্রিয় দেশবাসী, কৃষি আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। পুনরায় দেশকে খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। গত ২ বছরে সারের দাম আরও ৩ দফা হ্রাস করেছি। ইউরিয়া এখন ১২ টাকা, টিএসপি ২০ এবং ডি.এ.পি ২৫ টাকা কেজি। কৃষকদের সেচের জন্য ডিজেল ও বিদ্যুতে চলতি অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা কৃষক পরিবারের মধ্যে কৃষি কার্ড বিতরণ করেছি। ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। কৃষক এখন ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে পাচ্ছেন। আমরা ১৯৯৮ সালে বর্গা চাষীদের মাঝে কৃষি ঋণ দেওয়া শুরু করি। গত অর্থবছরে ১১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছি। চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হবে। এসব কর্মসূচির ফলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়েছে। এ কারণেও চালের দাম বেড়েছে। আমরা পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। পাটের মণ প্রতি দাম ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য পাটের জেনোম সিকোয়েন্স বা জন্ম রহস্য আবিষকার। এ আবিষকারের ফলে আমরা পাটের উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব। দরিদ্র এবং সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করছি। চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী, পুলিশ এবং গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জন্য রেশনের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আমরা মঙ্গা বিতাড়িত করেছি। বয়স্ক ভাতার হার ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ২০ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে ২২ লাখ করা হয়েছে। দুস্থ মহিলা ভাতা ৩০০ টাকা করা হয়েছে। এ খাতে ৩৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচিতে ১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আমরা ’একটি বাড়ি একটি খামার’ কর্মসূচি পুনরায় বাস্তবায়ন শুরু করেছি। গৃহহীনদের জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গৃহায়ন তহবিল থেকে গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রিয় দেশবাসী, দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুই বছরে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছি। ইতোমধ্যে আমরা সুলতানা কামাল সেতু, শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু এবং চট্টগ্রামে শাহ আমানত সেতু উদ্বোধন করেছি। চালু করা হয়েছে ঢাকা বাইপাস সড়ক। দপদপিয়া সেতু এবং করতোয়া ও তিস্তা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কালুরঘাট ব্রিজের পাশে আরেকটি ব্রিজ এবং লেবুখালি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়ককে চার লেইনে এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কসহ আরও কয়েকটি সড়ক চার-লেইনে উন্নীত করছি। রেল সংযোগহ বহু আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল নির্মাণ কাজ এবং পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তে রেললাইন স্থাপনের কাজও শিগগিরই শুরু হবে। ঢাকার যানজট নিরসনে বিজয় সরণী এবং টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু চালু করা হয়েছে।। কুড়িল এবং গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি এবং বনানী-জুরাইন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছে। ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজও শীঘ্রই শুরু হবে। ঢাকা শহরে ১০০টি নতুন বিআরটিসি বাস নামানো হয়েছে। আরও ৪৩০ বাস শিগগিরই রাস্তায় নামবে। ঢাকায় মেট্রোরেল স্থাপনের লক্ষ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। আমিন বাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ওয়াটার বাস চালু করা হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে কম্যুটার ট্রেন সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটি বিজ্ঞানসমমত ও যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে চলতি বছর ২৩ কোটি বই বিতরণ শুরু হয়েছে। ওয়েবসাইটে সব বই দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা এবং গত বছর থেকে অষ্টম শ্রেণীতে জুনিয়র স্কুল ও দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। গত দু্‌ই বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার শতকরা ৮০ ভাগের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। এ দুই বছরে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৫২ হাজার সহকারী শিক্ষক এবং প্রায় দুই হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিন হাজার মাধ্যমিক স্কুল, ৭১টি কলেজের একাডেমিক ভবন এবং ৩০৬টি মডেল স্কুল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ছয়টি কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা প্রসারের জন্য ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। আরও ছয়টি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ৩০টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করেছি। ১০০টি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্স খোলা হয়েছে। ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। আমরা চাই, নতুন প্রজন্মকে যথাযথভাবে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। প্রিয় দেশবাসী, সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা গত মেয়াদে ১৮ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেগুলো বন্ধ করে দেয়। এবার আমরা নতুন করে ১০ হাজার ক্লিনিক চালু করেছি। আমরা ১৩ হাজার ৫০০ হেলথকেয়ার প্রোভাইডার, সাড়ে চার হাজার ডাক্তার, ২ হাজার নার্স এবং সাড়ে ৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দিয়েছি। ইতোমধ্যেই সারাদেশে ২২৩টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ এবং জেলা হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। মাতৃকালীন ছুটি ছয় মাস করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রিয় দেশবাসী, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আইসিটি নীতিমালা ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৬০০ টির বেশি কম্পিউটার ল্যাব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০টি সাইবার সেন্টার, ১৫২টি কমিউনিটি ই-সেন্টার এবং ৬৪ জেলায় তথ্য বাতায়ন স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সফটওয়্যার এবং কম্পিউটার শিল্প প্রসারের লক্ষ্যে কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক এবং কারওয়ান বাজারে আইসিটি ইনকিউবেটর স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি সফটওয়্যার টেকনোলোজি পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। বিভাগীয় শহরগুলোতে আইটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তিকে সিলেবাসভুক্ত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে। সকল ইউনিয়ন পরিষদে ২০১৩ সালের মধ্যে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে দেশেই অনেক কম দামে ল্যাপটপ তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুব সমাজই পারে একটি দেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যুব সম্প্রদায়ের অকুণ্ঠ সমর্থনে আমরা ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করি। আমরা প্রতিটি যুবককে আধুনিক রাষ্ট্রের উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাঁদের উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চাই। এজন্য ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পাইলট কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত তিনটি জেলার প্রায় ৬৫ হাজার বেকার যুব ও যুবমহিলাকে দুই বছরের জন্য আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ট্রেনিং শেষে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। ২০১০ সালে আমরা সাফল্যের সঙ্গে সাউথ এশিয়ান গেমসের আয়োজন করি। অন্যতম স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং ১২ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে তাঁদের মাটিতে হারানো ছাড়াও নিউজিল্যান্ডকে একদিনের ক্রিকেটে পরপর চারটি খেলায় হারিয়ে সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশের টাইগাররা। প্রিয় দেশবাসী, বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮০ ডলার হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর ২০১০ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫ কোটি ডলার। বর্তমান অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজন শিল্পায়ন। আগের যে কোন সময়ের চাইতে দেশে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার আগেকার ১৬/১৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২/১৩ শতাংশ করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে মাথাপিছু আয় অন্ততঃ ২ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এজন্য আমরা চঁনষরপ-চৎরাধঃব চধৎঃহবৎংযরঢ় (চচচ) কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। দুই ধাপে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে সহযোগিতা করায় তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। আমদানিকারক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও আমরা এ কৃতিত্ব অর্জন করেছি। তৈরি পোশাক, ঔষধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ, ফার্নিচার, খাদ্যদ্রব্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, সিরামিকস, কুটির শিল্প, ইট, সিমেন্ট, টাইলস্‌ ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ৯২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২.৬ শতাংশ বেশি। চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করেছি। নতুন মজুরি কমিশন ঘোষণা করা হয়েছে। গার্মেন্টস খাতে ন্যূনতম মজুরি ২০০৬ সালের ১ হাজার ৬৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯ কোটি ডলার। প্রবাসীরা যাতে বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে পারে সে জন্য আমরা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করেছি। বিভিন্ন দেশে মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে। এখন প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এসএমএস-এর মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিদেশে গেলে আর বাড়িঘর, জমি বিক্রি করতে হবে না। এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে কাজের জন্য যেতে পারবেন। আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুসারে মেসিন রিডেবল পার্সপোর্ট ও ভিসা প্রদান করা হচ্ছে। গৃহায়ন সমস্যা সমাধানের জন্য রাজধানীর চারপাশে ৪টি স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলা ও উপজেলায় গৃহায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া নগরীতে এক লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ডিটেইল্ড এরিয়া প্লান বা ড্যাপ প্রণয়ন করেছি। প্রিয় দেশবাসী, সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের পূর্ব শর্ত। পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এ বছর আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মানুষ যাতে নির্বিঘ্ন্নে চলাফেরা করতে পারে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে আমরা এমন পরিবেশ তৈরি করার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। গত দু’টি ঈদ, পূজা এবং বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় জনগণ গভীর রাত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করেছে। জনগণ উৎসবের সত্যিকার আমেজ ভোগ করেছে। ২০০৯ সালের নৃশংস বিডিআর হত্যাকাণ্ড এবং বিডিআর বিদ্রোহের বিচার শুরু হয়েছে। এজন্য নতুন আইন করা হয়েছে। বিডিআর-এর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ বি.জি.বি করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শিল্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শিল্প পুলিশ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটন পুলিশ, মেরিন পুলিশ, সিকিউরিটি ও প্রটেকশান ব্যাটালিয়ন এবং জঙ্গী দমনে পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সমমানী ভাতা ৯০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা করেছি। মুুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরির শতকরা ৩০ ভাগ কোটা তাঁদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের জন্য প্রযোজ্য হবে। সচেতন দেশবাসী, আমরা অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাস করি। সেজন্য আমরা তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং তথ্য কমিশন গঠন করেছি। আমাদের মিডিয়া এখন পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। আমরা এবার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২টি নতুন টেলিভিশন চ্যানেল, ১৪টি কম্যুনিটি রেডিও এবং ১টি এফএম রেডিও খোলার অনুমতি দিয়েছি। গত মেয়াদেও আমরাই বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর অনুমোদন দেই। স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করা আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ কে সংশোধন করা হয়েছে। পৌরসভা আইন, সিটি কর্পোরেশন আইন এবং ইউনিয়ন পরিষদ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য চার হাজার ৪৮৪টি ইউনিয়নে ৪৪২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বের ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য আমরা দায়ী নই। আমরা বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। কানকুনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সংক্রান্ত সমেমলনে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড গঠনে ঐকমত্য হয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য আমরা নিজস্ব তহবিল গঠন ও ১৩৪টি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তহবিল থেকে ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছি। গড়াই ও যমুনা নদীসহ অন্যান্য নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে মৃতপ্রায় নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। প্রিয় দেশবাসী, মহান জাতীয় সংসদকে আমরা আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। নবম জাতীয় সংসদের সাতটি অধিবেশনের ১৭৪টি কার্যদিবসে সর্বমোট ১৩০টি আইন পাশ হয়েছে। গত দুই বছরে আমরা মাত্র চারটি অধ্যাদেশ জারি করেছি। জাতীয় শিক্ষা নীতি, পিআরএসপি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতিসংঘে বাংলাকে অফিসিয়াল ভাষার মর্যদা প্রদানের প্রস্তাবসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে বিস্তারিত সাধারণ আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো নিয়মিত বৈঠক করছে। দূঃখের বিষয় সংসদে আমাদের প্রধান বিরোধী দল তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা জাতীয় সংসদের ১৭৪টি কার্য দিবসের মধ্যে মাত্র ৪৪ কার্য দিবস উপস্থিত ছিল। বিরোধীদলের নেতা মাত্র ৫দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। অথচ সংসদে কথা বলতে তাদের কোন বাধা নেই। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। জাতির প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ বিচার কাজ হবে। প্রিয় দেশবাসী, ’সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’- এই নীতির ভিত্তিতে আমরা আমাদের প্রতিবেশি দেশ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি। আমাদের বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তারা আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ। প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সর্বাধিক উন্নয়নই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা যখনই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি, সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছি। এবারও আমরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে চলেছি। সাধারণ মানুষের কল্যাণে নেওয়া গত ২ বছরের কার্যক্রমই তার প্রমাণ। জনগণের সম্পদ লুট করে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, যারা জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। অতীতের মত এখনও তারা চেষ্টা করছে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার যেমন তারা পদে পদে বাধাগ্রস্ত করেছে, এবার তারা চাইছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে এদেশে না হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করি। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করছি, ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার লোভে নয়। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে জনগণের জন্য কাজ করে যাব। গত ২ বছরে জনকল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, তার সবগুলোর ফলাফল হয়ত এখনই পাওয়া যাবে না। সময়ের পরিক্রমায় দেশবাসী এসব কর্মসূচির ফলাফল দেখতে পাবেন। কারণ, আমাদের সবকিছু শুরু করতে হয়েছে নতুন করে। আমাদের পূর্ববর্তী সরকারগুলো কোন উন্নয়ন কর্মসূচি রেখে যায়নি। বরং শিক্ষার হার, বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা সর্বক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে রেখে গেছে। দেশবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবই, ইনশাআল্লাহ। প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পার হতে চলেছে। জাতির পিতা শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, লাখো শহীদের প্রত্যাশিত বাংলা, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছি।
আমরা দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি আত্মমর্যদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি দূর করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এদেশের দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই, ইনশাআল্লাহ। আসুন, সকল মতপার্থক্য ভুলে, ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’’

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা