মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের সম্মাননা জানাবে সরকার



মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের সম্মাননা জানাবে সরকার

ঢাকা, ডিসেম্বর ১৩ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখা বিদেশি নাগরিকদের বিশেষ সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাদেরকে এই বিশেষ সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার ৪০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব ব্যক্তিকে সম্মাননা দেওয়া হবে। এজন্য পররাষ্ট্র এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, সম্মাননা জানাতে তাদের মধ্যে যারা জীবিত তাদের সবাইকেই বাংলাদেশে নিয়ে আসা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদেরকে মরণোত্তর সম্মাননা জানানো হবে। এজন্য তাদের প্রতিনিধিদেরকে বাংলাদেশে আনার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক, দার্শনিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিক বিশেষ অবদান রেখেছেন তারা আছেন সম্মাননা জানানোর তালিকায়। আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবদান রাখ বিভিন্ন সংগঠনও।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য প্রায় ৪০০ জন বিদেশিকে সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তাদের মধ্যে ভারতের ২২৬ জন এবং পাকিস্তানের ৪০ জন রয়েছেন। তালিকায় ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো, যুগোস্লাভিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটো এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী লিওনিদ ব্রেজনেভ রয়েছেন। ২৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থাও এই তালিকায় রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের ৩৯ বছর পর তাদেরকে এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। তালিকার ৩৮৮ জনের মধ্যে রাজনীতিবিদরা ছাড়াও কবি, দার্শনিক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, গায়ক, চলচ্চিত্রকার ও সামরিক ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার চিত্র বিশ্ব স¤প্রদায়ের কাছে তুলে ধরে মুক্তি সংগ্রামকে বেগবান করতে ভূমিকা রেখেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির নেতৃত্বে সম্মাননা প্রদান বিষয়ক জাতীয় কমিটি রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এই বিদেশি ব্যক্তিবর্গ ও সংস্থার নাম চূড়ান্ত করে। দিপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির ও কমিটির অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি তার কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা তালিকা চূড়ান্ত করেছি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে শিগগিরই তা প্রকাশ করবো।" বৈঠক শেষে কমিটির এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তালিকায় রাশিয়ার ৮, যুক্তরাজ্যের ৩৫, আয়ারল্যান্ডের ২, অস্ট্রেলিয়ার ৫, নেদারল্যান্ডসের ৩, আর্জেন্টিনার ৩, সুইজারল্যান্ডের ৮, জার্মানির ২, ফ্রান্সের ১৩, ভূটানের ৩, জাপানের ১৩, শ্রীলঙ্কার ২ এবং নেপালের ১৫ নাগরিকের নাম রয়েছে যারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। এছাড়া তালিকায় কানাডা, কিউবা, ডেনমার্ক, ইতালি, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভেনেজুয়েলা, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড এবং সাবেক যুগোস্লাভিয়ার একজনের করে নাম রয়েছে ওই তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী ওই সব বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৫০ গ্রাম ওজনের একটি করে স্বর্ণপদক প্রদান করবেন। তাদেরকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। চিঠিটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে। তালিকায় ভারতীয়দের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার স্মরন সিং, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৃষ্ণ মেনন, সাবেক কংগ্রেস নেতা শচীন্দ্র লাল সিংহ, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রায়, কূটনীতিক ডিপি ধর, পিএন ধর, আই জে গুজরাল, প্রণব মুখার্জী, ফিল্ড মার্শাল মানেক শ, জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, পণ্ডিত রবি শঙ্কর, চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, গায়ক মান্না দে, শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন, বিষ্ণু দে এবং গায়ক মোহাম্মদ রফি। তালিকায় স্থান পাওয়া পাকিস্তানি রাজনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন, সিন্ধু প্রদেশের জাতীয়তাবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্ধু জিএম সৈয়দ। এ ছাড়া আছেন শেখ আয়াজ, মাস্টার খান গুল এবং গাউস বখশ বিজেঞ্জো। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে সে সময় পদত্যাগকারী ড. তারেক রহমান ও ওমর আসগর এবং এয়ার মার্শাল আজগর খান, মানবাধিকার কর্মী আহমেদ সেলিম, তাহেরা মাজহার এবং অ্যাডভোকেট জাফর মালিকের নামও এ তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি ও এডমন্ড মাল্কি, কূটনীতিক আর্চার কে ব্লাড (১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাসের কনসাল জেনারেল), গায়ক জোয়ান বায়েজ (তখন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বাংলাদেশিদের জন্য গান গেয়েছেন), সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'র রচয়িতা অ্যালেন জিনসেনবার্গ গিন্সবার্গ, জয় বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাতা লেয়ার লেভিনসহ ৮৩ জন মার্কিন নাগরিকের নামও রয়েছে তালিকায়। তালিকায় স্থান পাওয়া যুক্তরাজ্যের ১৪ জন রাজনীতিকের মধ্যে রয়েছেন রাসেল জনস্টোন, ব্র"স ডগলাস মান, জন স্টোনহাউজ এবং টম উইলিয়াম। যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক স্যার মার্ক টালি, সায়মন ড্রিং, নিকোলাস টমালিন ও ক্লেয়ার হলিংওয়াস্থ, গায়ক জর্জ হ্যারিসন, ডোনাল্ড চেজওয়ার্থ, পল কনেল, ম্যারিয়েট্টা প্রোকোপকেও এ সম্মাননা মর্যাদা দেওয়া হবে। পাঁচ অস্ট্রেলিয় নাগরিক হচ্ছেন, বীরপ্রতীক খেতাব পাওয়া রাজনৈতিক নেতা উইলিয়াম এএস কুডারল্যান্ড, লেস জনসন এমপি, ডব্লিউএ ওয়াডারল্যান্ড, পেনি টুইডি ও ডাক্তার জিওফ্রে ডেভিড। ভূটানের সাবেক রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী উগিয়েন শারিং, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব দাশো কার্মা দোরজি ওই তালিকায় রয়েছেন। তাকাশি হায়াকামা, সেতসুরেই সুরুসিনা এবং হাজিমা কাতসুবেসহ ১৩ জাপানিকে দেওয়া হবে সম্মাননা। নেপালের নেতাদের মধ্যে বিপি কৈরালা, জিপি কৈরালা, সুশীল কৈরালা ও রামবরণ যাদবকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছে জাতীয় কমিটি। আয়ারল্যান্ডের নাগরিক ব্যারিস্টার নোরা শরিফ ও বিমল বসু, কানাডার নাগরিক সগীর আহমেদ, কোরিয়ার নাগরিক হ্যাং সুক জা, মালয়েশিয়ার রাজনীতিক ড. সুরিয়ান, শ্রীলঙ্কার নাগরিক মোহাম্মদ স্যানুন, মোহাম্মদ শ্যালি ও সেনারাত গুনাবর্ধনে, ভেনেজুয়েলার নাগরিক কার্ডিনাল হোসে হামবার্তো কুইনতারো, নেদারল্যান্ডসের নাগরিক মানবাধিকারকর্মী জ্যান উইলেম ভ্যান ডার এব, এলস ভ্যান ডার বার্গ ও কিনটেন ওয়াট বাজে, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেইন ইলিয়ক, সুইডেনের নাগরিক লার্স লিজোবোর্গ এমপি, ডেনমার্কের কুড নেইলসন, আর্জেন্টিনার এদভার্দো মালেয়া, আর্নেস্তো সাবাতো, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিক খান মজলিশসহ সুইডেনের টিডোর ভন সুপ্পোন, ভিক্টর আমব্রিখট ও টনি হাজেন, জার্মানির নাগরিক সুনীল দাশগুপ্ত ও হোর্স্ট ফাস এবং ইতালির ফাদার ম্যারিনো রিগান ওই সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় সম্মাননার জন্য মনোনীত হওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে, সুইস রেডক্রস, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর), ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি), ভারতীয় বেতার আকাশ বাণী, জেনেভা ভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস, আইসিআরসি, অক্সফাম জিবি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা