জামায়াতের আইনজীবী ফখরুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে

স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে সন্দেহভাজন অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধ হয়নি। অপরদিকে তার এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে এর পাল্টা জবাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউর গোলাম আরিফ টিপু ও সদস্য জেয়াদ আল মালুম। তারা বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এজন্য ফখরুল ইসলামের নাগরিকত্বও বাতিল হতে পারে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৯ বছর পর এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি কা-জ্ঞানহীতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। সরকারের দায়িত্বশীল একটি মহল সূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রস্তুতি চলছে। সূত্রটি আরো জানায়, যে জামায়াত আইনজীবী রাষ্টদ্রোহী মূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। আইনজীবী ফখরুল ইসলাম গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছে পাকিসতানের সঙ্গে ভারতের, বাংলাদেশের সঙ্গে নয়। এর একদিন আগে ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম চলাকালীন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহামমদ মুজাহিদদের মুক্তির বিষয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি একই কথা বলেছিলেন।সেদিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচার পতি মো. নিজামুল হক তাকে কড়া ভাষায় বলেন, এটা ঠিক নয়। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মধ্যে। ফখরুল সাংবাদিকদের আরো বলেন, একাত্তরের সেই যুদ্ধে পাকিসতানের সৈন্যরা ভারতের কাছে আতসমর্পণ করেছিল। বাংলাদেশের ওসমানীর (বাংলাদেশের সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী) কাছে নয়। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পাকিসতানি বাহিনী বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর কাছে আতসমর্পণ করেছিল, যা ইতিহাসে আছে। ফখরুল ইসলামের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্যের জন্য ফখরুলের নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে। জ্ঞানের অভাব থাকায় তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, তাদের পেছনে যত বড় শক্তিই থাকুক না কেন এ ধরনের বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের সদস্য জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, যারা স্বাধীনতার
৩৯ বছর পরও এ ধরনের মনতব্য করে তারা পাকিসতানি চিনতা-চেতনা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। তারা চেয়েছিল এই দেশ পাকিসতানই থাকুক। এজন্যই তারা স্বাধীনতা স্বীকৃতির ৩৯ বছর পর এসেও এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অসিতত্বের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২৫ মার্চ তদনত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এর মধ্য দিয়ে প্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে ধারাবাহিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। জোরালো তদনত শুরু হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তদনেত জামায়াতের একাধিক শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগও মিলেছে এমন বক্তব্য তদনত সংস্থা থেকে এসেছে। এ পর্যায়ে এসে একজন আইনজীবীর কাছ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য দেয়ায় যেন যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং স্বাধীনতা বিতর্কিত না হয় সেজন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা